কপ ২৯: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর আরও সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজন
বছরের সবচেয়ে বড় জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৯ এ অংশগ্রহণ করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা আজারবাইজানের বাকুতে একত্রিত হয়েছেন। এবারের সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কার্বন নির্গমন ২০৩৫ সালের মধ্যে ৮১ শতাংশ হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্যান্য দেশগুলোকেও একই পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “পরিষ্কার শক্তি বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে, এবং এখন থেকে কেউ এই প্রবণতাকে থামাতে পারবে না।”
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তহবিলের দাবি: কেন এত জরুরি?
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট ও তীব্র। আফ্রিকার বুর্কিনা ফাসো, যা একসময় কৃষিতে সমৃদ্ধ ছিল, আজ খরা, আকস্মিক বন্যা এবং রোগবিস্তারজনিত সমস্যায় জর্জরিত। দেশটির পরিবেশ মন্ত্রী রজার বারো জানান, “আমাদের জনগণ প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধ করছে। এই অর্থ আমাদের জীবন রক্ষা করবে, আমাদের জমি ফিরিয়ে দেবে।”
উন্নত দেশগুলোর উচ্চ কার্বন নির্গমনের প্রভাব এইসব দেশের উপর পড়েছে, তাই তারা দাবি করেছে যে ধনী দেশগুলো তাদের জন্য একটি বিশাল তহবিল তৈরি করুক, যা $১ ট্রিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে। এই তহবিল দরিদ্র দেশগুলোর জন্য নতুন প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নয়নে সাহায্য করবে।
আজারবাইজানকে নিয়ে বিতর্ক: তেল ও গ্যাসের ভূমিকা
বাকুতে কপ ২৯-এর আয়োজন নিয়ে কিছু বিতর্কও দেখা দিয়েছে। আজারবাইজান একসময় তেল ও গ্যাসের উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত, এবং কপ ২৯ আয়োজন করার মাধ্যমে তাদের এই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা করছে বলে অনেকেই মনে করেন। আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি এই বিষয়ে কথা বলার সময় পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের “মিথ্যা প্রচারণা” নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং দাবি করেন যে তার দেশের মোট কার্বন নির্গমন মাত্র ০.১ শতাংশ।
জাতিসংঘের আহ্বান: ঘড়ির কাঁটা চলে যাচ্ছে, এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে
জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেছেন, “টিকটিক শব্দ শুনছেন? আমরা এখন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমায় পৌঁছাতে সময়ের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি।” তিনি ২০২৪ সালকে “জলবায়ু ধ্বংসের শ্রেণিকক্ষ” হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের তৈরি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
মহাসচিবের ভাষণে তিনি ধনী দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আরও তহবিল সরবরাহ করার আহ্বান জানান। তার মতে, ধনী দেশগুলো কার্বন নির্গমনের প্রধান কারণ এবং তাদের ওপরই বেশি দায়িত্ব বর্তায়।
স্পেনের আহ্বান: পুনর্গঠন ও অভিযোজন প্রয়োজন
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের সাম্প্রতিক বন্যার কথা উল্লেখ করে “তীব্র পদক্ষেপ” নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বন্যায় স্পেনে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ঘটেছে। তিনি বলেন, “আমাদের শহরগুলিকে আরও টেকসই করতে হবে এবং পরিবেশ বান্ধব অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।”
সমাধানের পথ: তহবিল ও প্রযুক্তির প্রসার
কপ ২৯-এর আলোচনায় মূলত ধনী দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে হ্রাস করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সম্মেলনের লক্ষ্য হলো $১ ট্রিলিয়ন তহবিল গঠন, যাতে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং প্রকৃত ঝুঁকির সম্মুখীন দেশগুলো এই তহবিলের সহায়তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
উপসংহার
কপ ২৯ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের কথা এবং নতুন প্রতিশ্রুতিগুলি একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে—জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। ধনী দেশগুলোর জন্য এই মুহূর্তে তহবিল সরবরাহ এবং দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা করা অপরিহার্য। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই সহায়তা কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যও প্রয়োজন।
CTA: জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আপনার মতামত জানান। পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতার জন্য আরও জানুন এবং এই যাত্রায় আমাদের সঙ্গী হোন।