দক্ষিণ এশিয়ার বাঁচার শেষ সুযোগ? দক্ষিণ এশিয়ার চাহিদা ৫ ট্রিলিয়ন ডলার
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশাল আর্থিক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোরই ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রয়োজন ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিশাল অর্থ ব্যয় হবে কার্বন নিঃসরণ কমানো, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়। তবে এই অর্থায়ন নিয়ে বড় প্রশ্ন হলো, উন্নত বিশ্ব তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে কি না। দক্ষিণ দক্ষিণ এশিয়ার চাহিদা ৫ ট্রিলিয়ন ডলার
দক্ষিণ এশিয়ার প্রয়োজন: কেন এত বড় আর্থিক চাহিদা?
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে।
- জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার ২০টি দেশের ৩৭৪টি প্রকল্পের জন্য ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
- এই অর্থের একটি বড় অংশ যাবে **কার্বন নিঃসরণ কমানো** (মিটিগেশন) এবং **পরিবেশ অভিযোজন** (অ্যাডাপটেশন)-এর জন্য।
- মিটিগেশনের জন্য প্রয়োজন প্রায় ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার।
- অভিযোজনের জন্য দরকার ৩২৫ থেকে ৪৩১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের চাহিদা: সবার চোখে ছোট দেশ, কিন্তু বড় দায়িত্ব
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, এবং নদীভাঙনের কারণে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।
- জাতিসংঘের রিপোর্টে বাংলাদেশের জন্য ধরা হয়েছে ১২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক চাহিদা।
- এ অর্থ ব্যবহার হবে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়।
- বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর চাহিদায় একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এ অঞ্চলে প্রকৃতি সুরক্ষায় দেশগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।
‘কপ২৯’-এর গুরুত্ব: উন্নত বিশ্ব কি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে?
‘কপ২৯’ সম্মেলন হচ্ছে আজারবাইজানের বাকুতে, যেখানে জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে। প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, উন্নত বিশ্ব ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেবে।
- বিশ্বজুড়ে ৫ হাজার ৭৬০টি প্রকল্পের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৮ শতাংশ প্রকল্পের জন্য খরচের হিসাব ধরা হয়েছে।
- এতে মোট আর্থিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৫ থেকে সাড়ে ৮ ট্রিলিয়ন ডলার।
- জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান শীর্ষে।
উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা: প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা
উন্নত দেশগুলো কি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে? এ প্রশ্নটি এ বছর কপ সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য।
- এর মধ্যে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়নের অনিশ্চয়তা।
- বিশ্বনেতাদের অনেকের অনুপস্থিতি এই আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।
- যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পরিবর্তন, বিশেষ করে জলবায়ু বিষয়ে নতুন প্রশাসনের অবস্থান, অর্থায়নকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষত ভারত, বাংলাদেশ, এবং পাকিস্তানের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশগত নয়, একটি অর্থনৈতিক সংকটও।
- বায়ুদূষণ কমানো এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বড় বিনিয়োগ করতে হবে।
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশের করণীয়
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির প্রসার বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও কার্যকর নীতিমালা এবং স্থিতিশীল অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
পাঠকদের প্রতি আহ্বান
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে হলে আমাদের সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আপনি কীভাবে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে পারেন? আপনার মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না।