দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মৌসুমের একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা দ্রুত ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড়টি ‘ফিঞ্জাল’ নামে পরিচিত হবে এবং এটি ভারতের তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কার দিকে অগ্রসর হতে পারে।
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা না থাকলেও এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টিপাত হতে পারে। চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কীভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণ অত্যন্ত জরুরি।
কীভাবে সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফিঞ্জাল’?
বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়ে লঘুচাপকে শক্তিশালী করে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ তার পূর্বাভাসে জানিয়েছেন, ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে এই লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সৌদি আরবের প্রস্তাবিত নামানুসারে, এটি ‘ফিঞ্জাল’ নামে চিহ্নিত হবে। ঘূর্ণিঝড়টি মূলত ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য এবং শ্রীলঙ্কার উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য প্রভাব
বাংলাদেশের ওপর প্রভাব
বাংলাদেশে এই ঘূর্ণিঝড় সরাসরি আঘাত হানার আশঙ্কা নেই। তবে এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টিপাত হতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক জোয়ার বৃদ্ধি পেতে পারে, যা স্থানীয় জনগণের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কায় সম্ভাব্য ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের তামিলনাড়ু এবং শ্রীলঙ্কায় আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত, প্রবল বাতাস এবং বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা
ঘূর্ণিঝড় ‘ফিঞ্জাল’-এর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
- সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে লঘুচাপ দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধি: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা এবং তীব্রতা বেড়ে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি আমরা এখনই সচেতন না হই, তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্যোগ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
কীভাবে প্রস্তুত থাকবেন?
যদিও ঘূর্ণিঝড় ‘ফিঞ্জাল’ বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই, তবুও উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত আপডেট অনুসরণ করুন এবং কোনো জরুরি নির্দেশনা এলে তা মানুন।
উপকূলীয় বাসিন্দাদের জন্য কিছু পরামর্শ:
- – নিরাপদ আশ্রয়স্থল চিহ্নিত করুন।
- – প্রয়োজনীয় খাবার, পানি এবং ওষুধ সংগ্রহ করুন।
- – বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিরাপদে রাখুন।
উপসংহার
ঘূর্ণিঝড় ‘ফিঞ্জাল’ কেবল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়; এটি জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি সতর্কবার্তা। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা বাড়ছে।
আমাদের উচিত সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে।
Call-to-Action
আপনার এলাকায় আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট পেতে আমাদের সাইটটি ফলো করুন এবং আরও তথ্য জানতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।