পরিবেশ প্রকল্প, কিন্তু কোথায় গাছ?
রাজশাহীর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলে বৃক্ষপালন প্রকল্পের নামে প্রায় কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরাঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়কজুড়ে বনায়ন কর্মসূচির জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে বাস্তবতা হলো, এই প্রকল্পের অধীনে যে গাছ লাগানোর কথা ছিল, তার মাত্র ২৫ শতাংশই চোখে পড়ছে। প্রকল্পের শর্তানুযায়ী চারাগাছ রোপণ এবং পরিচর্যার দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট বিভাগের, কিন্তু বাস্তবে এর কোনও সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবেশ প্রকল্পে কোটি টাকার অনিয়ম
প্রকল্পের অর্থ কীভাবে লোপাট হলো?
২০২১-২৩ অর্থবছরের এই প্রকল্পে বনজ, ফলজ, ওষুধি এবং বাহারি গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি কিলোমিটারের জন্য একজন মালি নিয়োগের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে, এসব কর্মসূচি শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। ঠিকাদাররা গাছ রোপণ এবং পরিচর্যা ছাড়াই বিল উত্তোলন করেছেন। ফলে প্রকল্পের বিশাল অংশের অর্থ লোপাট হয়ে গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সড়কের দুই পাশে গাছ লাগানোর কথা থাকলেও অনেক জায়গায় একটিও চারা দেখা যাচ্ছে না। যারা প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের তত্ত্বাবধানে ঘাটতি ছিল। এমনকি যেখানে গাছ লাগানো হয়েছে, সেখানেও পরিচর্যার অভাবে গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।
ক্ষোভ ও তদন্তের প্রতিশ্রুতি
এই ঘটনার জেরে সওজ বিভাগ একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বগুড়ার একজন নির্বাহী প্রকৌশলী এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন। তদন্ত কমিটি দ্রুত কাজ শুরু করবে এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবে বলে জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রকল্পে অনিয়ম বা দুর্নীতি প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পরিবেশবাদী অনেকেই বলছেন, শুধু তদন্ত করে দায়সারা হলে হবে না; প্রকল্পে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রকৃতির প্রতি প্রতারণা
পরিবেশ রক্ষার জন্য এমন প্রকল্পগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দেশের সড়কগুলোতে সবুজ বনায়ন একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এসব প্রকল্পে অনিয়ম হলে পরিবেশের ক্ষতি শুধু বাড়বে, বরং মানুষের আস্থাও নষ্ট হবে।
কীভাবে সমাধান সম্ভব?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় আরও কঠোর তদারকির প্রয়োজন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিটি পদক্ষেপ তদারকি করা যেতে পারে। যেমন, গাছ রোপণ এবং পরিচর্যার প্রক্রিয়া স্যাটেলাইট বা ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
এ ছাড়া যারা প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত, তাদের প্রশিক্ষণ এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা দরকার। জনগণের ট্যাক্সের অর্থ যেখানে পরিবেশ রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশ প্রকল্পে কোটি টাকার অনিয়ম
ভবিষ্যৎ পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের দায়িত্ব
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি বড় শিক্ষা হলো, প্রকৃতির নামে নেওয়া প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন ছাড়া পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়। আমরা সবাইকে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলো নিয়ে সচেতন হতে হবে এবং সরকারের কাছে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দাবি করতে হবে।
Call to Action:
আপনার মতামত দিন! পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আপনি কী পদক্ষেপের পরামর্শ দেবেন? নিচে মন্তব্য করে আপনার চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন। পরিবেশ রক্ষায় সকলে একসঙ্গে কাজ করা জরুরি।
