নদীতে ইলিশ ধরার সেই প্রাণবন্ত দৃশ্য যেন ধীরে ধীরে অতীত হতে চলেছে। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার আর প্রশাসনের উদাসীনতায় আজ বিপন্ন ইলিশসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। জেলেদের জীবিকার তাগিদ, প্রশাসনের দুর্বলতা, আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একসঙ্গে মিলে তৈরি করেছে এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ।
নিষিদ্ধ জালের ছড়াছড়ি: কেমন ক্ষতি হচ্ছে?
ইলিশ শিকারের জন্য ৬.৫ সেন্টিমিটারের ফাঁসের জাল ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও, বাস্তবে নদীতে দেখা যায় একের পর এক কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জাল, এবং পাইজাল। ছোট ফাঁসের এই জালগুলোতে শুধু ইলিশের পোনাই নয়, আটকা পড়ে মাছের ডিম থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রজাতির ছোট মাছও।
প্রতিদিন কয়েক মণ ‘চাপলি’ নামে পরিচিত ইলিশের পোনা জালে ধরা পড়ছে। এসব পোনা নদী থেকে তুলে বিক্রি করে দেন জেলেরা। এভাবে পোনা নিধন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ইলিশ আমাদের টেবিল থেকে একেবারে হারিয়ে যেতে পারে।
কেন চলছে এই নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার?
জেলেদের বক্তব্যে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর বাস্তবতা। তারা জানান, নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করতে মাসোহারা দিতে হয় প্রশাসনের নির্দিষ্ট কিছু সদস্যকে। “জাল পাততে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না দিলে অভিযান চালিয়ে জাল তুলে নিয়ে যায়,” এমন অভিযোগ করেছেন অনেকে।
যে জাল নদীর মাছের জীবনপ্রক্রিয়া ধ্বংস করছে, সেই জাল পাতার সুযোগ মিলছে ঘুষের বিনিময়ে। এ পরিস্থিতিতে যারা জীবিকার তাগিদে এই পেশায় আছেন, তাদের জন্য নিষিদ্ধ জাল যেন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের যোগসূত্র
নদীতে ইলিশের প্রজনন এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর পানির গুণগত মান কমে যাচ্ছে। দূষণ আর ডুবোচরের কারণে ইলিশের ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার হার অনেক কমে গেছে।
একটি ইলিশ বছরে ৩০ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয়। যদি ইলিশ তার প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ছাড়তে পারত, তাহলে আজ এমন সংকট আসত না। কিন্তু নদীর মোহনায় চরগড়া, পাইজাল আর বেহুন্দি জালে আটকা পড়ে ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ব্যাহত হচ্ছে।
নিষিদ্ধ জাল বন্ধে কী করা যেতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নিষিদ্ধ জাল বন্ধে জেলেদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। যেমন, তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনা এবং সঠিক ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
একই সঙ্গে স্থানীয় মানুষকে সচেতন করতে হবে যে, মাছ ধরার এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তাদের জীবনও বিপন্ন হবে। প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করা ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
উপসংহার: সময় শেষ হওয়ার আগে আমাদের ভাবা উচিত
নিষিদ্ধ জালের অবাধ ব্যবহারে ইলিশ আর নদীর মাছ শুধু বিলুপ্তির পথে নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশও। এটা শুধু একটি মাছের সংকট নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও একটি বড় হুমকি। আপনার কী মনে হয়? এই সমস্যার সমাধানে আমাদের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? আপনার মতামত জানান কমেন্টে। পোস্টটি শেয়ার করে আরও মানুষকে সচেতন করুন।