শীতের আমেজে প্রকৃতি যখন পরিবর্তিত হচ্ছে, তখন নড়াইলের বিল ও জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে। প্রতিবছর এই সময় অতিথি পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করে, তবে তাদের নিরাপত্তা এখন এক বড় চ্যালেঞ্জ। অসাধু শিকারিরা ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি নিধন করছে, যা পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপজ্জনক। অতিথি পাখির শিকার
অতিথি পাখির আগমন
প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত অতিথি পাখিগুলো নড়াইলের বিভিন্ন জলাশয়ে অবস্থান করে। এই সময় তারা খাবারের সন্ধানে দল বেঁধে আসে। তবে, জলাশয়ের পানি কমে যাওয়ার ফলে খাদ্যের সন্ধানে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশি পাখিদের সঙ্গে দেশীয় নানা প্রজাতির পাখিও যোগ দিচ্ছে, যা প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করছে। অতিথি পাখির শিকার
শিকারির কৌশল
অতিথি পাখিদের শিকার করতে শিকারিরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা বিষটপ, জাল ও বড়শি ব্যবহার করে পাখিদের আটকে রাখছে। এমনকি, মুঠোফোনে অর্ডার করলেই অতিথি পাখিগুলো ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে এই পাখিগুলোর অবাধ বিক্রি চলছে, যেখানে প্রতি জোড়া ডুঙ্কর ও কাঁদা খোচা পাখি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রযুক্তির ব্যবহার
শিকারিরা আধুনিক প্রযুক্তিও ব্যবহার করছে। তারা ডাক পোর্টেবল সাউন্ড-বক্সে অতিথি পাখিদের ডাক বাজিয়ে সতীর্থদের আকৃষ্ট করছে। এই কৌশলে অতিথি পাখিরা নিরাপদ মনে করে শিকারির ফাঁদে নামতে শুরু করে। ফলে, একাধিক প্রজাতির অতিথি পাখি সহজেই আটকা পড়ছে।
বিক্রয়ের চিত্র
কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী বাজার ও রঘুনাথপুর বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অতিথি পাখির বিক্রি অবাধে চলছে। অগ্রিম অর্ডারের মাধ্যমে ক্রেতাদের বাড়িতে এসব পাখি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বিক্রেতাদের মতে, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দাম ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সমস্যা এবং সমাধান
সমস্যা
- বাংলাদেশে অতিথি পাখিদের শিকার একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর শীতকালে অতিথি পাখিরা দেশে আসার পর অসাধু শিকারিরা তাদের নির্বিচারে শিকার করছে। এই শিকারীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে, যেমন:বন্দুক, বিষটোপ ও জাল ব্যবহার: পাখিদের ধরার জন্য তারা এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে।
- প্রযুক্তির ব্যবহার: ডাক পোর্টেবল সাউন্ড-বক্সে অতিথি পাখিদের ডাক বাজিয়ে সতীর্থদের আকৃষ্ট করছে, যা তাদের নিরাপত্তা ভঙ্গ করে।
- অবাধ বিক্রি: অতিথি পাখিরা বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে প্রতি জোড়া পাখির দাম ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
এই সমস্যা শুধু অতিথি পাখিদের জন্য নয়, বরং এটি পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিথি পাখিরা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের নিধন জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলছে।
সমাধান
- অতিথি পাখি শিকার বন্ধ করতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:আইন প্রয়োগ: ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন এবং ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে উল্লেখিত শাস্তির কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এই আইনের আওতায় পাখি শিকারের জন্য সর্বোচ্চ এক বছরের জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
- জনসচেতনতা বৃদ্ধি: স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে যাতে তারা অতিথি পাখিদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসে। বিভিন্ন সভা ও কর্মসূচির মাধ্যমে এই সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
- শিকারিদের তালিকা প্রস্তুত: যেসব এলাকায় অতিথি পাখি আসে, সেখানে শিকারিদের নামের তালিকা প্রস্তুত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দেওয়া যেতে পারে। এতে তারা এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে।
- পরিবেশবাদী সংগঠনের উদ্যোগ: পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে সক্রিয়ভাবে শিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
- নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি: অতিথি পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা নিরাপদে থাকতে পারে এবং খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে।
অতিথি পাখিদের শিকার একটি গুরুতর সমস্যা, যা আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপজ্জনক। সরকার, স্থানীয় জনগণ এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর যৌথ প্রচেষ্টায় এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আমাদের উচিত অতিথি পাখিদের রক্ষা করা, কারণ তারা আমাদের প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ।
Call-to-Action: আপনার মতামত জানাতে নিচে মন্তব্য করুন এবং আমাদের ব্লগ সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না!