31.6 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুন ২০, ২০২৫
spot_img

চট্টগ্রামে শব্দদূষণের সংকট: নীরব এলাকাগুলো কেন আর নীরব নেই?

নীরব এলাকা কি সত্যিই নীরব?

চট্টগ্রাম নগরের কিছু এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে স্কুল, উপাসনালয় এবং হাসপাতাল থাকায় শব্দ দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজন। জামালখান মোড়ের মতো এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। হর্ন, মাইকের শব্দ, এবং যানবাহনের কার্যক্রম এই এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শব্দদূষণ ঘটাচ্ছে। চট্টগ্রামে শব্দদূষণের সংকট

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুসারে, নীরব এলাকায় শব্দের মাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডেসিবেলের মধ্যে থাকা উচিত। তবে চট্টগ্রামের নীরব এলাকাগুলোতে এই মান ৬০ থেকে ৭৪ ডেসিবেলের মধ্যে রয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

শব্দদূষণের প্রধান উৎস

চট্টগ্রামে শব্দদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন। পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের ৯৫ শতাংশ শব্দদূষণের জন্য এই হর্ন দায়ী। নির্মাণকাজ, জেনারেটর, মাইকের অপব্যবহার এবং সভা-সমাবেশের শব্দও শব্দদূষণকে বাড়িয়ে তুলছে। নির্বাচনী প্রচারণা এবং ধর্মীয় কার্যক্রম বিশেষ সময়ে এই সমস্যাকে আরও তীব্র করে তোলে। চট্টগ্রামে শব্দদূষণের সংকট

শব্দদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি

শব্দদূষণের প্রভাব সরাসরি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পড়ে। শিশুদের মধ্যে হৃদরোগ এবং প্রবীণদের মধ্যে শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ে। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী শব্দদূষণ অস্থায়ী এবং স্থায়ী দুই প্রকারের শ্রবণশক্তি লোপ ঘটাতে পারে। এছাড়া শব্দজনিত ব্যাঘাতের কারণে ঘুমের সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাও দেখা দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে শব্দদূষণের সম্পর্ক

শব্দদূষণের প্রভাব কেবল স্থানীয় পরিবেশেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি জলবায়ু পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখে। যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন এবং জেনারেটরের অতিরিক্ত ব্যবহার জ্বালানির চাহিদা বাড়ায়, যা কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান গতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে এই অতিরিক্ত নিঃসরণ বড় ভূমিকা রাখে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সীমাবদ্ধতা

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে শব্দমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করলেও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনও সীমিত। জরিপে দেখা গেছে, শহরের প্রতিটি এলাকায় শব্দমাত্রা নির্ধারিত মানের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ বেশি। ইপিজেড এবং ফ্রি পোর্ট মোড়ের মতো এলাকায় শব্দদূষণ সবচেয়ে গুরুতর। তবে অভিযান এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) গত নভেম্বর মাসে মাত্র ছয়টি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করেছে। এর ফলে সমস্যার প্রকৃত গভীরতা মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের দিক থেকে অভিযান পরিচালনার অভাবও স্পষ্ট।

সমাধানের পথ কী হতে পারে?

শব্দদূষণ কমাতে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সচেতনতা কর্মসূচি অত্যন্ত জরুরি। গাড়ির হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার কমাতে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনতে হবে। নির্মাণকাজ এবং কলকারখানায় শব্দ শোষণকারী যন্ত্র বাধ্যতামূলক করা উচিত। এছাড়া, স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বাড়ানো হলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব

শব্দদূষণ একটি নীরব ঘাতক, যা আমাদের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি সাধন করছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা শুধুই আইনগত প্রয়োজন নয়; এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নৈতিক দায়িত্বও। শব্দদূষণ রোধে আপনার এলাকায় কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন? মতামত জানান মন্তব্য বিভাগে। পরিবেশ সংক্রান্ত আরও তথ্য পেতে আমাদের সাইটে সাবস্ক্রাইব করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ