31.6 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুন ২০, ২০২৫
spot_img

পাবনায় শীতের পাখি হারানোর গল্প: জলবায়ু পরিবর্তন ও শিকারের প্রভাব

খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে আর ফেরে না পাখিগুলো

পাবনার বেড়া উপজেলার কৈটোলা গ্রামে প্রকৃতির সঙ্গে এক অসাধারণ মিল দেখা যায়। এখানকার আকাশকলি দাসের বাড়ি পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ অভয়াশ্রম। মানুষ তাঁকে পাখির বন্ধু হিসেবেই চেনে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বাড়িতে পাখির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে।

শীতের শুরুতে কিছু পাখি এলেও, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যা কমে যায়। খাবারের সন্ধানে বের হওয়া পাখিগুলো অনেক সময় শিকারিদের ফাঁদে পড়ে আর ফিরে আসতে পারে না। আকাশকলি দাস আক্ষেপ করে বলেন, “পাঁচ-ছয় বছর ধরে দেখছি, শীতের শুরুতে প্রচুর পাখি এলেও শেষ পর্যন্ত সেগুলো কমে যায়। এবার তো এমনিতেই পাখি কম এসেছে। সকালে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে আর ফেরে না পাখিগুলো।”

শিকার ও জীববৈচিত্র্যের হুমকি

সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার বিভিন্ন খাল, বিল এবং চরাঞ্চলে একশ্রেণির চোরা শিকারি পাখি শিকারে মেতে উঠেছে। এরা জাল, বিষটোপ, এবং ফাঁদের সাহায্যে পাখি ধরে প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শিকারের কারণে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, শীতের শুরুতেই বিলের পানি কমে যাওয়ায় পাখিদের খাবারের উৎস আরও সংকুচিত হয়েছে। এই সময় শিকারিরা সুযোগ বুঝে বিল এবং চরে পাখি শিকার শুরু করে। এভাবে ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও তীব্র করে তুলছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তন পাখিদের জীবন এবং অভ্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। শীতের সময় বিলগুলোর পানি শুকিয়ে যাওয়া, খাদ্যের উৎস কমে যাওয়া এবং প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস হওয়ার ফলে পাখিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। স্থানীয় কৃষিজমিতে মানুষের কার্যকলাপও পাখিদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।

শিকারিদের দমন ও আইনি উদ্যোগ

স্থানীয় প্রশাসন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ চোরা শিকারিদের আটক করতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। রাজশাহী বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, “পাখি শিকার আইনত নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেব।” তবুও সচেতনতার অভাব এবং আর্থিক লাভের কারণে শিকার বন্ধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা কী করতে পারি?

পাখিদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে সচেতনতা খুবই জরুরি। আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করা, স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং আইনি কার্যক্রম আরও জোরদার করা অপরিহার্য।

সমাপ্তি এবং আহ্বান

পাখি আমাদের প্রকৃতির অপরিহার্য অংশ। তাদের রক্ষা করা শুধু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, আমরা সবাই মিলে পাখিদের রক্ষায় কাজ করি। আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে মন্তব্য করুন এবং সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিন। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার এই যাত্রায় আপনার অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ