ঢাকায় অতিবৃষ্টির হুমকি
ঢাকা শহর, যেখানে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস, জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে একটি বড় বিপদের সম্মুখীন। মাত্র ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই শহরের ৮০% এলাকা পানির নিচে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত। ঢাকায় এমন বৃষ্টি এখন আর অবাস্তব কিছু নয়। শহরের জলাভূমি ভরাট, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, এবং দুর্বল নিকাশী ব্যবস্থা এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বৃষ্টির সময় ও তীব্রতার পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির সময় ও তীব্রতা বদলে যাচ্ছে। অধ্যাপক নিশাত জানান, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের স্বাভাবিক বৃষ্টির সময় এখন আষাঢ়-শ্রাবণে স্থানান্তরিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “দিল্লিতে মাত্র ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে কী অবস্থা হয়, তা আমরা দেখেছি। ঢাকায় একই পরিমাণ বৃষ্টি হলে অর্ধেক রাস্তায় পানি উঠে যায়। ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে শহরের বিপর্যয় হবে অনিবার্য।”
সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লবণাক্ততার ঝুঁকি
জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। অধ্যাপক নিশাতের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভবিষ্যতে যশোর থেকে গোপালগঞ্জ এবং চাঁদপুর পর্যন্ত অঞ্চলের দক্ষিণাংশ সমুদ্রের অংশে পরিণত হতে পারে। ঢাকা শহরের চারপাশে লবণাক্ত পানি ঘিরে ফেলবে, যা কৃষি, পানি এবং জনজীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ঢাকার প্রতিরক্ষার জন্য উচ্চ বাঁধের প্রয়োজন হতে পারে, তবে তা যথেষ্ট হবে কিনা, সেটিও এখন প্রশ্নের মুখে।
জলাবদ্ধতা: ঢাকার নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জ
ঢাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রতিদিনই বড় হয়ে উঠছে। শহরের প্রাকৃতিক জলাভূমি এবং খাল ভরাট করে গড়ে উঠছে আবাসন প্রকল্প। এতে বৃষ্টির পানি বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাত্র ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যান চলাচল ব্যাহত হয়, বাড়ে নাগরিক দুর্ভোগ। অধ্যাপক নিশাত বলেন, “আমাদের নিকাশী ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল যে অতি বৃষ্টির কথা না ভাবলেও সমস্যায় পড়তে হয়।”
প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রস্তুতির অভাব
ঢাকার মতো একটি মেগাসিটির জন্য দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি অপরিহার্য। তবে বাস্তবে, এ শহর এখনো বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। অধ্যাপক নিশাত বলেন, “ছোটদের ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার মতো দুর্যোগের সময় কীভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়, তা শেখানো প্রয়োজন। স্কুলগুলোতে স্যানিটেশন এবং নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”
খাদ্য উৎপাদন ও জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য উৎপাদনেও বড় প্রভাব পড়বে। অধ্যাপক নিশাত সতর্ক করে বলেছেন, “চলতি শতাব্দীর মধ্যে যদি তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় ২ ডিগ্রি বেড়ে যায়, তাহলে ধান, গমের মতো প্রধান ফসলের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।” এর সঙ্গে ফুল ফোটার সময় বদলে যাওয়া এবং পরাগায়নপ্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার মতো সমস্যাগুলো কৃষি খাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
কীভাবে প্রস্তুত হওয়া উচিত?
ঢাকা শহরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে এখন থেকেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। নিকাশী ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, জলাভূমি সংরক্ষণ, এবং টেকসই নগর পরিকল্পনা অপরিহার্য। নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্কুল পর্যায় থেকে দুর্যোগ মোকাবিলার শিক্ষা দেওয়া এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
জলবায়ুর বিপদ সম্পর্কে সচেতন হন এবং প্রস্তুতি নিন! ঢাকা শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন। পরিবেশ সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। #জলবায়ুপরিবর্তন #ঢাকাপ্লাবন #পরিবেশসংরক্ষণ