ডিএনডি খালের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার লেক পুনঃখনন এবং সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। এর আওতায় রাস্তা, ব্রিজ, ওয়াকওয়ে, ঝুলন্ত বাগানসহ আধুনিক নাগরিক সুবিধা তৈরির পরিকল্পনা ছিল। তবে, দীর্ঘ চার বছর পার হয়ে গেলেও প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের হতাশ করেছে এবং প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে।
প্রকল্পের ধীরগতি ও সমস্যার মূল কারণ
ডিএনডি খাল সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ, সিসি ব্লক দ্বারা খালের পাড় বাঁধাই এবং ঝুলন্ত বাগানসহ অন্যান্য কাঠামো নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওয়াকওয়ের কাজ শেষ হয়নি, এবং নির্মিত কাঠামোগুলোর বেশ কয়েকটি সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
খালের পানি দূষিত হয়ে পড়েছে এবং পানিতে আবর্জনা জমছে। স্থানীয় কাউন্সিলরদের সহায়তায় লেকের ওয়াকওয়ে দখল করে কাঁচাবাজার বসানোর অভিযোগ রয়েছে, যা লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
রাজনৈতিক প্রভাব ও দখলের সমস্যা
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দখলের মাত্রা আরও বেড়েছে। কাঁচাবাজার ও ভ্যান গাড়ি বসানোর ফলে লেকের পশ্চিম পাশের রাস্তা যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। আদমজী ফায়ার সার্ভিসের উল্টোদিকে লেকের ওপর নির্মিত ব্রিজেও একই ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যেখানে জনগণের জন্য নির্মিত স্থাপনা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশের উপর প্রভাব
অপরিকল্পিত কাজ এবং অবৈধ স্থাপনার কারণে লেকের পানি দূষিত হচ্ছে। পলিথিন ও আবর্জনা জমে খালের পরিবেশ নষ্ট করছে। লেকের পাড়ের সিসি ব্লক দেবে যাওয়ার কারণে সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব দুইই হুমকির মুখে পড়েছে।
প্রকল্পের অসম্পূর্ণতা ও অর্থায়নের সংকট
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পটি জাইকার অর্থায়নে চলছিল, কিন্তু অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার কারণে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। যদিও উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তবুও প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
কীভাবে সমাধান সম্ভব?
ডিএনডি খালের জলাধারের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, প্রকল্পের সঠিক তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যৌথভাবে কাজ করে লেকের বাকি কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। অপরিকল্পিত দখল এবং ওয়াকওয়ের উপর বাজার বসানোর মতো কার্যকলাপ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এর পাশাপাশি, অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে জনগণের জন্য লেকটি উন্মুক্ত করা উচিত।
পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য লেকের পানি পরিষ্কার রাখা এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা দরকার। স্থানীয় জনগণকে লেকের গুরুত্ব এবং সৌন্দর্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এটি সম্ভব হলে, স্থানীয় বাসিন্দারা লেকের রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করতে আরও আগ্রহী হবেন। পরিবেশ বান্ধব নীতিমালা কার্যকর করার মাধ্যমে লেকের চারপাশে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে।
সবশেষে, এই প্রকল্পে আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সঠিক অর্থায়নের পরিকল্পনা করা উচিত। সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে পুনরায় অর্থায়নের ব্যবস্থা করলে প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে, ডিএনডি খালের সৌন্দর্য রক্ষা করা যাবে এবং এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে পরিণত হবে।
উপসংহার
ডিএনডি খালের জলাধারের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি পরিবেশ এবং স্থানীয় জনগণের জন্য একটি বিশাল সম্পদ হতে পারে। তবে, প্রকল্পের ধীরগতি, অবৈধ দখল এবং অর্থায়নের সংকট প্রকল্পটিকে একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং স্থানীয় জনগণের জন্য আরও ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।