প্লাস্টিক ও পলিথিনের পরিবেশগত হুমকি
প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার পরিবেশের জন্য একটি মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বসুন্ধরা শুভসংঘ ৭ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে “প্লাস্টিক ও পলিথিনমুক্ত সমাজ গড়ি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলি“ স্লোগানে এক বিশাল গণসচেতনতা কার্যক্রম শুরু করেছে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল প্লাস্টিক ও পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা। প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার রোধ
কর্মসূচির বিস্তারিত: শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি
কর্মসূচির শুরুতে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বসুন্ধরা শুভসংঘের জাবি শাখার সহসভাপতি আশুরা আজাদ পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক ও পলিথিনের ক্ষতি নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিক এবং পলিথিন মাটিতে ৫০০ থেকে ১০০০ বছর পর্যন্ত অক্ষত থাকতে পারে, যা মাটির গুণগত মান কমিয়ে দেয় এবং উর্বরতা হ্রাস করে। আরও গুরুতর বিষয় হল, এসব উপাদান পোড়ালে পরিবেশে ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়, যা বায়ুদূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী।
এছাড়া, তিনি জানিয়ে দেন যে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণও প্লাস্টিক ও পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার। গত বছর ১ অক্টোবর থেকে দেশের সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সরকারকে সাহায্য করতে পারি এবং আমাদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।”
প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব উপকরণ
আলোচনায় আরও বলা হয় যে, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্য, কাপড়ের ব্যাগ, কাঁচ এবং লোহা জাতীয় পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ওপর চাপ কমানো সম্ভব। বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পোস্টারিং কর্মসূচি এবং হাতে হাতে প্রচার চালিয়েছেন, যা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাঁটানো হয়েছে। প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার রোধ
সরকারের উদ্যোগ: একটি পরিবর্তনের সূচনা
বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২০২১ সালের ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। তবে, এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে জনসচেতনতার বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা মনে করেন, পলিথিন এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধে সাধারণ জনগণের উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক সবুজ পৃথিবী
প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার রোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে সবাই যদি একযোগে কাজ করতে পারে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ, নিরাপদ এবং সবুজ পৃথিবী নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
উপসংহার: পরিবেশের জন্য আমাদের ভূমিকা
এই ধরনের উদ্যোগগুলো আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এখন সময় এসেছে পরিবেশবান্ধব উপকরণের ব্যবহার অভ্যাসে পরিণত করার এবং প্লাস্টিক ও পলিথিনের মতো পরিবেশ-ধ্বংসকারী উপকরণের ব্যবহার কমিয়ে আনার। এটি শুধু আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্যই নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও এক বড় আশ্বাস হতে পারে।