নদীখেকোদের কার্যকলাপ বাংলাদেশের জলবায়ু সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নদীভাঙন, ভূমি দখল, এবং নদীর জমির উপর অবৈধ নির্মাণ পরিবেশের ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলছে। এইসব ঘটনায় শুধু যে জলবায়ু পরিবর্তনই ত্বরান্বিত হচ্ছে, তা নয়, এর ফলে স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রাও বিপদে পড়ছে। এমন এক ঘটনা ঘটছে রাজৈর, শংকরদি টেকেরহাট বাজার এলাকায়, যেখানে জাফর শেখ, যিনি একসময় মাংস বিক্রি করতেন, নদীর জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। নদীখেকো জাফরের অবৈধ নির্মাণ
জাফর শেখ: নদীখেকো এবং তার কর্মকাণ্ড
জাফর শেখ, যার আরেক পরিচয় হলো ‘কসাই জাফর’, দুই বছর আগে কুমার নদের জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেন। প্রথমে প্রশাসন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল, তবে এরপর ধীরে ধীরে আবার নির্মাণ কাজ চালিয়ে যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই জমি জাফর শেখের মামাদের দাবি করা হলেও জমির প্রকৃত মালিকানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একদিকে জাফর শেখ তার মা’র জমি বলে দাবি করছেন, অন্যদিকে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এই জমি একসময় কৃষিজমি ছিল।
নদীভাঙন এবং দখলদারির ভয়াবহতা
কুমার নদ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নদীভাঙন এবং এর আশপাশের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। নদীখেকোদের কর্মকাণ্ড শুধু এককভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে না, বরং জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করছে। নদীঘেঁষা এলাকার বাসিন্দারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কেননা তারা জানেন, একসময় এই এলাকাগুলি কৃষির জন্য উপযোগী ছিল, তবে আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে নদী দখলের কারণে। নদীখেকো জাফরের অবৈধ নির্মাণ
জেলা প্রশাসনের দুর্বলতা
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময় কুমার নদ দখলমুক্ত করার চেষ্টা করেছে, তবে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে জানেন না, জাফর শেখ এখন নদী দখল করে কি নির্মাণ করছেন। প্রশাসন বাধা দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও প্রশাসন বাধা দেওয়ার কথা বলছে, তবুও জমি দখলের কাজে যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে এবং ভবন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।
কেন এটি জলবায়ু সংকটের অংশ?
নদীখেকোদের কার্যক্রম শুধু স্থানীয়ভাবে ক্ষতিকর নয়, এটি জলবায়ু সংকটের একটি ভয়াবহ উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীভাঙন আরও তীব্র হয়ে ওঠে, ভূমির উপর গাছপালা, ফসলের উৎপাদন ধ্বংস হয়, এবং এলাকার বাসিন্দাদের জীবিকা বিপন্ন হয়। পরিবেশের ওপর এই নেতিবাচক প্রভাব শুধু এককভাবে একটি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং এটি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা সৃষ্টি করছে। নদী দখল এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ত্বরান্বিত হচ্ছে।
ভবিষ্যতের পদক্ষেপ এবং আইনগত ব্যবস্থা
এখনো পর্যন্ত প্রশাসন কোনো শক্ত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়নি। এটি শুধু একটি ক্ষতিকর উদাহরণ নয়, বরং অন্য অঞ্চলে একই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ এবং আইনি পদক্ষেপকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। নদী দখল ঠেকাতে একটি নীতি ও আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যেখানে স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসন একযোগে কাজ করবে।
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ এবং করণীয়
নদীখেকোদের এই অপরাধ শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং এটি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু সংকটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যদি এই কার্যক্রম থামানো না যায়, তবে নদীভাঙন এবং ভূমি দখল আরও তীব্র হয়ে উঠবে, যা সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মিলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। একে শুধু একটি স্থানীয় সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত নয়, বরং এটি একটি জাতীয় সংকট হিসেবে মোকাবিলা করতে হবে।
Call-to-Action: জলবায়ু সংকট এবং নদীখেকোদের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আপনিও পাশে দাঁড়ান।