28.1 C
Bangladesh
শনিবার, জুন ২১, ২০২৫
spot_img

ছাদে চাষ করে কিভাবে আইনুল মাসিক ২৫ হাজার টাকা আয় করছেন?

করোনাভাইরাসের সময় থেকে শুরু করে সফল উদ্যোক্তা

২০২০ সালের করোনাভাইরাস মহামারির সময় যখন সারা বিশ্ব কার্যত থেমে গিয়েছিল, তখন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আইনুল ইসলাম তার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু করেন। তিনি ইউটিউব থেকে জানতে পারেন জিনসেং নামের একটি ঔষধি গাছের কথা, যা স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যার জন্য উপকারী। জমির অভাবে তিনি তার বাড়ির ছাদকে কাজে লাগানোর চিন্তা করেন। এ সিদ্ধান্তই তার জীবন পাল্টে দেয়। জিনসেং চাষে সফলতা

জিনসেং চাষের শুরুর গল্প

আইনুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা প্রথমে এই উদ্যোগের বিরোধিতা করলেও, তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। বাড়ির ছাদে বেলে দোআঁশ মাটি দিয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় জিনসেং চারা লাগানোর মাধ্যমে চাষ শুরু করেন তিনি। তার এই চাষাবাদ শুরুতে পরীক্ষামূলক হলেও, দ্রুতই এটি সফলতার মুখ দেখতে শুরু করে। এক বছরের মধ্যেই তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন এবং তা থেকে আয় করতে সক্ষম হন। জিনসেং চাষে সফলতা

জিনসেং চাষের পদ্ধতি এবং ফসল সংগ্রহ

জিনসেং গাছ একটি ঔষধি উদ্ভিদ, যা পরিপক্ক হতে প্রায় এক বছর সময় নেয়। আইনুল ইসলাম ছাদে বস্তাভর্তি মাটি দিয়ে গাছগুলো লাগিয়ে পরিচর্যা করেন। একবার গাছ থেকে মূল সংগ্রহ করার পর, সেগুলো রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে বিক্রি করেন। ১০০ গ্রাম জিনসেং পাউডার তিনি ১,২০০ টাকায় বিক্রি করেন। প্রতিমাসে তার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়, যা তার পরিবারের জন্য একটি বড় সহায়ক।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং সম্ভাবনা

জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বের কৃষিক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাত কৃষকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে ছাদে চাষাবাদ একটি টেকসই সমাধান হতে পারে। আইনুলের মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

জিনসেং চাষে বিশেষ যত্ন এবং কম পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। এছাড়া, এর চাহিদা বাজারে সর্বদা বিদ্যমান। তাই এটি একটি লাভজনক ফসল হিসেবে বিবেচিত। আইনুলের মতে, জিনসেং চাষে পরিশ্রম কম এবং লাভ বেশি হওয়ার কারণে তিনি এই ফসল চাষে ঝুঁকেছেন।

জিনসেংয়ের উপকারিতা এবং স্থানীয় চাহিদা

জিনসেং একটি শক্তিবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। এটি ডায়াবেটিস এবং ফুসফুসের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। স্থানীয় ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, জিনসেংয়ের গুঁড়ার চাহিদা বাজারে ভালো।

আইনুলের উদ্যোগের প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আইনুলের এই উদ্যোগ অন্যান্য স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক জানান, এই ধরনের উদ্যোগ টেকসই কৃষি উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। আইনুলের পরিকল্পনা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই চাষাবাদ চালিয়ে যাওয়া।

বিশ্লেষণ এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

আইনুলের উদ্যোগ সফল হলেও, এটি একটি নতুন ধারণা হওয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রথমত, ছাদে চাষাবাদে মাটির মান এবং পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, ছাদের ওজন বহনের ক্ষমতাও বিবেচনা করতে হয়। তবে, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, ছাদে জিনসেং চাষের মতো উদ্যোগগুলো কৃষকদের জন্য একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। এটি না শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য ভালো, বরং অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক।

উপসংহার

আইনুল ইসলামের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার মতো উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন পথ দেখাচ্ছেন। আপনি কি এই ধরনের চাষাবাদে আগ্রহী? আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন এবং জিনসেং চাষের বিষয়ে আরও জানতে আমাদের পরবর্তী পোস্টগুলোর জন্য সাবস্ক্রাইব করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ