রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলায় অবৈধ ইটভাটাগুলির কারণে শুধুমাত্র পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে না, বরং কৃষি জমির ক্ষতিসাধনও হচ্ছে, যা কৃষকদের জীবনযাত্রায় একটি বড় বিপদ। এসব ইটভাটাগুলির বিরুদ্ধে যে আইন রয়েছে, তা যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় পুরো এলাকাটির পরিবেশই হুমকির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ইটভাটাগুলির অবাধ কার্যক্রম এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারঘাটের অবৈধ ইটভাটা
ইটভাটার অবাধ বিস্তার: চারঘাটের কৃষি জমি এখন বিপদে
চারঘাট উপজেলা একসময় কৃষি জমির জন্য পরিচিত ছিল। তবে গত কয়েক বছরে এই এলাকার ফসলি জমির একটি বড় অংশ হয়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটার অঙ্গ। বিশেষত, এসব ইটভাটাগুলির কারণে কৃষকদের উর্বর জমি হুমকির মুখে পড়েছে। উর্বর জমির টপ সয়েল (মাটির উপরিভাগ) কেটে নেয়া হচ্ছে, আর এই মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরি হচ্ছে। এটি শুধু মাটির গুণগত মানের ক্ষতি করছে না, বরং একে অপরের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা রক্ষার পথও বন্ধ করে দিচ্ছে।
এটি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। তারা জানাচ্ছেন, প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও অবৈধ ইটভাটাগুলি বন্ধ হয়নি, এবং এখানকার কৃষকরা তাদের জমি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। বিশেষত, ফসলি জমি কাটার ফলে ওই জমিতে আগের মতো চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না, যা একদিকে খাদ্য নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে স্থানীয় কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারঘাটের অবৈধ ইটভাটা
ইটভাটাগুলির প্রভাব: পরিবেশের অবনতি ও মানব স্বাস্থ্য
চারঘাটের অবৈধ ইটভাটাগুলিতে কাঠ পোড়ানোর কারণে ব্যাপক পরিমাণে ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছড়াচ্ছে। এতে স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এই দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, এমনকি শ্বাসতন্ত্রের রোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশু এবং বৃদ্ধরা এই দূষণের ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যারা এই অঞ্চলে বসবাস করেন, তারা দিনে-রাতে ইটভাটার ধোঁয়া শ্বাসে টেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করছে।
এছাড়া, কৃষি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, সড়ক অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শত শত ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে, এবং এটি স্থানীয় সড়কের অবস্থা খুব খারাপ করে ফেলেছে। সরকার যে রাস্তা তৈরিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে, সেগুলো এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। সড়কগুলো একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে, যা স্থানীয় জনগণের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে।
আইনগত অবস্থা: আইন থাকা সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব
বাংলাদেশে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ রয়েছে, যা ইটভাটার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও এর প্রয়োগ এখনো পুরোপুরি সফল হয়নি। চারঘাটে ১০টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র একটি ইটভাটার লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে, আর বাকিগুলো একেবারে অবৈধ। এসব ইটভাটাগুলির মালিকরা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষত, এমন পরিস্থিতিতে, আইন প্রয়োগের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা প্রমাণিত হচ্ছে।
এলাকার কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসানও বলেছেন, “আইনে রয়েছে যে ফসলি জমিতে কোনোভাবেই ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। তবে, এখানে অধিকাংশ ইটভাটা তৈরি হয়েছে দুই বা তিন ফসলি জমিতে। বিশেষত, যখন এই অবৈধ ইটভাটাগুলির কাজ শুরু হয়, তখন স্থানীয় জনগণের ক্ষতির দিকে আর নজর দেওয়া হয় না।”
তৎকালীন পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা: সময়ের সাথে তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি
রাজশাহী জেলা পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক নীল রতন জানিয়েছেন, “চারঘাটে দ্রুত অভিযান চালানো উচিত। অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব ইটভাটা বন্ধ করার পাশাপাশি আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত।”
পরিবেশবিদরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য প্রকৃতির ক্ষতি বন্ধ করার সাথে সাথে অবৈধ কার্যক্রমগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে এতে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, যা শুধু চারঘাটের নয়, বরং গোটা দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
চ্যালেঞ্জ: স্থানীয় জনগণের একত্রিত প্রচেষ্টা ও আইন প্রয়োগ
এখন প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এই অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করা যাবে? স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসন যদি একসাথে এই সমস্যা সমাধানে কাজ না করে, তবে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি আরও বাড়বে। সাধারণ জনগণকেই সচেতন হতে হবে এবং প্রশাসনকে এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি, স্থানীয় মানুষদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে পরিবেশের ক্ষতি বন্ধ করা যায় এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়।
কীভাবে একটি ছোট পদক্ষেপে বিশাল পরিবর্তন আসতে পারে
চারঘাটের অবৈধ ইটভাটাগুলির বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সরকারের উচিত, এ ধরনের কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা। পরিবেশের উন্নতি এবং কৃষি জমির সুরক্ষায় এই পদক্ষেপগুলো অপরিহার্য। আমাদের সকলকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য একসাথে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় এড়ানো যায়।
কল টু অ্যাকশন: আপনি কি মনে করেন অবৈধ ইটভাটাগুলির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? নিচে মন্তব্যে আপনার মতামত শেয়ার করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় একযোগে কাজ করার জন্য আমাদের সাথে যোগ দিন।