যখন জলবায়ু পরিবর্তন এবং বায়ু দূষণ যেমন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি তীব্র হয়ে উঠেছে, তখন এর মোকাবিলায় একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী উদ্যোগ হতে পারে—ছাদ বাগান। সম্প্রতি ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত একটি সেমিনারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ছাদ বাগানের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও বায়ু মানের উন্নতি করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন। ছাদ বাগান বায়ু দূষণ
ছাদে একটি সবুজ বিপ্লব
সেমিনারের মূল বক্তৃতায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “ছাদ বাগান শুধুমাত্র শহরের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নয়, বরং পরিবেশগত উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ খাদ্য এবং নির্মল বাতাসের জন্য ছাদ বাগানের প্রচার এবং প্রসার ছাড়া উপায় নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, “আজকের দিনে যেখানে বায়ু মান দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে, সেখানে ছাদ বাগান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি শুধু গাছপালা দিয়ে পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়ানো নয়, বরং আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশ এবং খাদ্য নিরাপত্তার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি উপায়।” ছাদ বাগান বায়ু দূষণ
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: সবজি ও ফলের বাগান
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে উপদেষ্টা জানান, তার নিজের ছাদ বাগানে অনেক ফলন হয়েছে। “আমার ছাদে ২১টি লাউ ধরেছে, বেগুন এবং কাঁচা মরিচও হয়েছে। অনেকদিন ধরে আমি এসব কিনে খাইনি,” তিনি বলেন, যা দেখায় যে ছোট আকারের ছাদ বাগানও শহরাঞ্চলে খাদ্য সরবরাহে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এটি ব্যাখ্যা করেছে যে, যেখানে জায়গা সীমিত এবং তাজা সবজির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে ছাদ বাগান একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “যারা ছাদ বাগান করতে পারেন না, তারা বারান্দায় ছোট গাছপালা লাগাতে পারেন। ধনে পাতা, কাঁচা মরিচ এবং বেগুনের মতো সবজি সহজেই উৎপাদন করা সম্ভব।”
ভবিষ্যতের জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ
যদিও ছাদ বাগান অনেক উপকারিতা প্রদান করে, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন যে, এটি বড় আকারে কার্যকর করার জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ছাদ বাগান প্রকল্পের প্রচারে নেতৃত্ব দিতে হবে, বিশেষ করে ঢাকায়।” তার মতে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য।
এছাড়া তিনি আরও যোগ করেন, “কৃষি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করলে ছাদ বাগান উদ্যোগগুলোর ফলাফল অনেক বেশি কার্যকর হবে।”
বায়ু দূষণ মোকাবিলা: একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল
বায়ু দূষণ সম্পর্কে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিষ্কারভাবে বলেন, “ধুলা দূষণ এবং বায়ু মানের উন্নতি করতে সময় লাগবে এবং এটি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা হতে হবে। এটি এক বছরে কমানো সম্ভব নয়। তবে আমরা যদি সড়কগুলো গাছ দিয়ে সবুজায়ন করি, তবে ধুলার মাত্রা কিছুটা কমানো সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ হলেও ছাদ বাগান একটি তাত্ক্ষণিক এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হতে পারে যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং বায়ু দূষণ একই সাথে মোকাবিলা করবে।”
একটি বাড়ন্ত আন্দোলন
এই সেমিনারে ‘ঢাকা শেকড়’ সংগঠনের সভাপতি মোতালেব মাশরেকী, গ্রীনওয়াচ ঢাকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কৃষিবিদ ড. মেহেদী মাসুদ এবং ছাদ বাগান বিশেষজ্ঞ গোলাম হায়দারসহ পরিবেশবিদ এবং কৃষি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলেই ছাদ বাগানের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বায়ু দূষণ মোকাবিলা করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, “ছাদ বাগান শুধু পরিবেশগত উপকারই করে না, এটি শহরের সৌন্দর্যও বাড়ায় এবং শহুরে বাসিন্দাদের প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার একটি উপায় হিসেবে কাজ করে।”
আহ্বান: আমরা সবুজ বিপ্লবের অংশ হতে পারি
ঢাকা শহর যেভাবে বায়ু দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য নিরাপত্তার সংকটের সম্মুখীন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার বক্তৃতায় জানান, “ছাদ বাগান হতে পারে এর সমাধান। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও এগিয়ে আসা উচিত।” তিনি যোগ করেন, “এটি প্রতিটি মানুষের জন্য একটি ছোট পদক্ষেপ, তবে পরিবেশের জন্য এটি একটি বিশাল উন্নতি।”
যারা পরিবেশের উন্নতির জন্য কিছু করতে চান, তারা এখনই ছাদ বা বারান্দা বাগান শুরু করতে পারেন। এটি একটি ছোট কাজ মনে হতে পারে, কিন্তু শহরের পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শেষ কথা: আপনি যদি পরিবেশের উন্নতির জন্য নিজের কিছু অবদান রাখতে চান, তবে আজই আপনার ছাদ বা বারান্দায় একটি বাগান শুরু করুন। আপনার অভিজ্ঞতা এবং ভাবনা শেয়ার করুন এবং অন্যদেরকে সবুজ বিপ্লবে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করুন!