প্রতিদিন আমাদের চারপাশে যে প্লাস্টিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে আমাদের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার সড়কগুলোতে এখন নতুন ধরনের প্লাস্টিক বেলুন বিক্রি হচ্ছে, যা সাধারণত এক রাতেই বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া হয়। মনে হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে শহরের প্রতিটি সিগন্যালেই এই প্লাস্টিক বেলুনগুলো দেখা যাবে। কিন্তু এই প্লাস্টিকের পণ্যগুলো কোথায় যাচ্ছে? একবার ব্যবহারের পর, এই প্লাস্টিকগুলো সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না হলে, তা নদী, সাগর, পুকুর এবং খালগুলোতে জমা হয়ে যায়। আমাদের সামগ্রিকভাবে এগুলো মেনে নেয়া হয়ে গেছে, কারণ একে আমরা ক্রমশ স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছি। তবে, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব খুব মারাত্মক। পুরনো প্লাস্টিক সরাতে না পারতেই নতুন প্লাস্টিকের ঢল
গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে বছরে প্রায় ৩.১৫ থেকে ৩.৮৪ বিলিয়ন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ২১.৪% রিসাইকেল হয়, বাকি ৭৮.৬% প্লাস্টিক সড়ক, নদী এবং সমুদ্রের মধ্যেই ফেলে দেওয়া হয়। সেইসাথে, প্রতিদিন নতুন নতুন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য বাজারে আসছে, যা পরিবেশের জন্য বড় বিপদ সৃষ্টি করছে।
প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে আইন এবং তার বাস্তবায়ন
বাংলাদেশে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে ২০০২ সালে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, তবে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান প্লাস্টিক এবং পলিথিন ব্যবহারে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। এই বৃদ্ধি শুধু পরিবেশের ওপর চাপই বাড়াচ্ছে না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও দায়ী। পুরনো প্লাস্টিক সরাতে না পারতেই নতুন প্লাস্টিকের ঢল
বাংলাদেশে পরিবেশ অধিদফতর পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার কমানোর জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই পদক্ষেপও যথেষ্ট নয়। কারণ শুধু পলিথিন ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করলে পুরো সমস্যা সমাধান হবে না। প্লাস্টিকের উৎপাদন এবং বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকবে।
প্লাস্টিক এবং জলবায়ু পরিবর্তন
প্লাস্টিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসৃত হয়, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াতে সহায়ক। তাছাড়া, একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক যদি সঠিকভাবে নিষ্পত্তি না হয়, তা পরিবেশকে দূষিত করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের এক নতুন মাত্রা তৈরি করে। সুতরাং, প্লাস্টিকের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন যে গভীরভাবে সম্পর্কিত, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। একবার ব্যবহারের পর পরিবেশে জমে থাকা এই প্লাস্টিকের প্রভাব আরও দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, যা আমাদের বাঁচতে এবং টেকসইভাবে পরিবেশে সহাবস্থান করতে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে।
প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতা এবং আইন বাস্তবায়ন
এখন সময় এসেছে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার। শুধু ক্রেতা বা ভোক্তাকে সচেতন করা নয়, বরং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। অনেকেই বলেছেন, ”ক্রেতা যদি প্লাস্টিক ব্যবহার না করে, তবে সে পুরোপুরি প্লাস্টিকমুক্ত হতে পারে না যদি না বাজারে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলো প্লাস্টিকের মধ্যে প্যাকেজ করা থাকে।” সুতরাং, সচেতনতা, আইন এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি।
এছাড়া, পরিবেশ অধিদফতরকে আরও শক্তিশালী করার জন্য তাদের মনিটরিং ও বাস্তবায়ন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। সম্প্রতি ৭৩ টন পলিথিন জব্দ করা হলেও, এটি মোট পরিস্থিতির জন্য খুব সামান্য। তাই, আইন বাস্তবায়ন এবং নিয়মিত অভিযান চালানো আবশ্যক।
উপসংহার
প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আরও একটি বিপদের সংকেত। আমাদের এ বিষয়ে আরও সজাগ হতে হবে এবং প্লাস্টিকের উৎপাদন, ব্যবহার এবং নিষ্পত্তি নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্রেতা বা ভোক্তা নয়, বরং উৎপাদনকারীদের ওপর নজরদারি এবং সরকারের সঠিক আইন প্রয়োগ প্লাস্টিক দূষণ রোধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের সচেতন হতে হবে, যাতে আগামী দিনে আমাদের পরিবেশ এবং জলবায়ু আরও বিপন্ন না হয়।
আপনার মতামত জানাবেন!
আপনি কি মনে করেন, প্লাস্টিক ব্যবহারের জন্য আমাদের আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না! 👇
#প্লাস্টিক #জলবায়ু_পরিবর্তন #পরিবেশ #টেকসই_উন্নয়ন #বাংলাদেশ #পরিবেশ_রক্ষা