নদী দখলের ভয়াবহ চিত্র
বাংলাদেশের নদীগুলো, যেগুলো একসময় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আজ দখল ও দূষণের শিকার। ময়মনসিংহের একটি উপজেলার খড়িয়া নদী এর একটি প্রমাণ। একসময় এই নদী ছিল প্রবল স্রোতধারার, যা আশপাশের মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। কিন্তু আজ এই নদী স্রোতহীন, পরিণত হয়েছে আবর্জনা আর কচুরিপানায় পূর্ণ এক জলাধারে। নদীর তীর জুড়ে গড়ে উঠেছে বাসাবাড়ি, দোকানপাট, এমনকি বহুতল ভবন। দখলের এই প্রবণতা শুধু নদী নয়, পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। নদীর জমি দখল ও দূষণ
খড়িয়া নদীর বর্তমান অবস্থা
খড়িয়া নদী প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি একটি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে প্রবাহিত। এক সময় নদীটি তার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বজায় রাখত। আশপাশের কৃষক এবং জেলেরা এই নদী থেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে নদীর জমি দখল এবং দূষণের ফলে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে।
বর্তমানে নদীটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর দুই পাশে ফসলের খেত এবং মাঝখানে কচুরিপানা। বহু বছর ধরে এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। নদীর জায়গায় গড়ে উঠেছে বাড়ি, দোকানপাট এবং বহুতল ভবন। দখলের ফলে নদীর প্রস্থ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে, এবং এতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অবৈধ দখল ও পরিবেশ দূষণ
নদীর জমি দখল করে অনেকেই সেখানে ফসল আবাদ করছেন বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। তাদের দাবি, তারা এই জমি ক্রয় করেছেন বা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। যদিও সরকারি নথিতে এসব জমি নদীর অংশ হিসেবেই চিহ্নিত। কিন্তু দখলদাররা কাগজপত্র তৈরি করে নিজেদের নামে জমি লিখে নিয়েছেন, এবং সেই জমি পরে অন্যদের কাছে বিক্রিও করছেন। নদীর জমি দখল ও দূষণ
অনেক জায়গায় নদীর তীরে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী দোকান, যেখানে প্রতিদিনের বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। আশপাশের কলকারখানা থেকেও বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়, যা নদীর পানি দূষিত করছে। এক সময় যে নদী থেকে মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত, আজ সেই নদীতে মাছের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্রশাসনের ভূমিকা
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী দখল এবং দূষণের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও, বাস্তবে এই সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময় নদী দখল মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও, তা কার্যকর হয়নি। কিছু অংশে খননকাজ শুরু হয়েছে, তবে দখলদারদের কারণে সেই কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দখলমুক্ত করা ছাড়া নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
পরিবেশের উপর প্রভাব
নদী দখল এবং দূষণ শুধু পরিবেশগত ক্ষতির কারণ নয়, এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক সমস্যা। নদীর স্রোত বন্ধ হওয়ার ফলে আশপাশের জমিগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর ফলে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণে জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আমাদের করণীয়
নদীকে দখলমুক্ত করার জন্য কেবল প্রশাসনের পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। স্থানীয় জনগণের সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণও প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যেকের উচিত নদীকে দূষণমুক্ত রাখা এবং দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। নদী রক্ষার জন্য আইন মেনে চলা এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
উপসংহার
নদী দখল ও দূষণ রোধে আমাদের সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। দখলমুক্ত একটি নদী কেবল স্থানীয় জনগণের জন্যই নয়, পুরো দেশের পরিবেশ রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
Call-to-Action: আপনার এলাকায় নদী দখল এবং দূষণ সম্পর্কে সচেতন হন। আপনার মতামত শেয়ার করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী ভূমিকা নিন। মন্তব্য করুন এবং আমাদের জানান আপনি কীভাবে নদী রক্ষায় সাহায্য করতে পারেন।