26.6 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুন ২০, ২০২৫
spot_img

পলিথিনমুক্ত বইমেলা: পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের নতুন পদক্ষেপ

বাংলাদেশের অন্যতম বড় সাংস্কৃতিক আয়োজন অমর একুশে বইমেলা এবার পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং বাংলা একাডেমি যৌথভাবে ঘোষণা করেছে, ২০২৫ সালের বইমেলা হবে পলিথিনমুক্ত। একুশে বইমেলা হবে পলিথিনমুক্ত

মেলায় এবার পলিথিন বা প্রোপাইলিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলজাত পানীয় পণ্যও মেলায় বিক্রি বা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

প্লাস্টিক দূষণ কেন বড় সমস্যা?

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার একটি বড় অংশ পুনঃব্যবহারযোগ্য নয়। এই প্লাস্টিক মাটিতে জমে থাকে, পানিতে মিশে যায় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে একটি চুক্তি করেছিল। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বাস্তবে এর কার্যকর বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এমন উদ্যোগ, যেমন পলিথিনমুক্ত বইমেলা, প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। একুশে বইমেলা হবে পলিথিনমুক্ত

বইমেলা এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ

বাংলাদেশের বইমেলা শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক ইভেন্ট নয়, এটি বইপ্রেমীদের জন্য একটি জাতীয় উৎসব। এই মেলায় গড়ে ৫০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়, যা পরিবেশবান্ধব নীতিমালায় পরিচালিত হলে বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “পলিথিন মুক্ত বইমেলার জন্য কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা চাই, এই উদ্যোগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক।”

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, “বইমেলার পরিবেশবান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়নে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।”

কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?

১. পলিথিন নিষিদ্ধ:

মেলায় পলিথিন বা প্রোপাইলিন ব্যাগের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

২. কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ:

বিকল্প হিসেবে মেলায় কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ সরবরাহ করা হবে।

৩. প্লাস্টিক বোতল নিষিদ্ধ:

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলজাত পানীয় নিষিদ্ধ করা হবে।

৪. পরিবেশ সচেতনতা প্রচার:

বইমেলার বিভিন্ন স্টলে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ প্রচারণার আয়োজন থাকবে।

এই উদ্যোগ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১. জলবায়ু সংকট মোকাবিলা:

প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পারে।

২. দেশীয় পণ্যের প্রচার:

কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে দেশীয় শিল্পকর্মের প্রচার বাড়বে এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কারিগররা লাভবান হবেন।

৩. গণসচেতনতা সৃষ্টি:

এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশের জন্য ভালো হবে না, বরং মানুষের মধ্যে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াবে।

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের চিত্র

বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৩০ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপন্ন হয়, যার একটি বড় অংশ পরিবেশে জমা হয়ে থাকে। সমুদ্র ও নদীতে জমে থাকা এই প্লাস্টিক বর্জ্য প্রাণীকুল ও উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

বাংলাদেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা আরও খারাপ হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পরিবেশবান্ধব নীতিমালার বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পলিথিনমুক্ত মেলা: ভবিষ্যতের দৃষ্টান্ত

এবারের বইমেলার পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ যদি সফল হয়, তাহলে এটি দেশের অন্যান্য মেলা এবং উৎসব আয়োজনেও পরিবেশবান্ধব নীতিমালা প্রয়োগের পথ দেখাবে।

১. স্কুল-কলেজের বইমেলা বা বই প্রদর্শনী।

২. ব্যবসায়িক মেলা ও বাণিজ্য মেলায় পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ।

৩. দৈনন্দিন জীবনে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করার অনুপ্রেরণা।

কীভাবে অংশ নেবেন এই উদ্যোগে?

১. পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাপড় বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করুন।

২. বইমেলায় গিয়ে পরিবেশবান্ধব পণ্য কেনার বিষয়ে সচেতন হোন।

৩. এই উদ্যোগের বিষয়ে অন্যদের জানাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করুন।

আপনার দায়িত্ব, আমাদের ভবিষ্যৎ

পরিবেশ রক্ষায় আমাদের প্রত্যেকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পলিথিনমুক্ত বইমেলা শুধুমাত্র একটি উদ্যোগ নয়, এটি একটি প্রতীক যা দেখায় যে ছোট পদক্ষেপেও বড় পরিবর্তন সম্ভব।

আপনার মতামত আমাদের জানাতে মন্তব্য করুন। পরিবেশের জন্য কাজ করার এই আন্দোলনে আপনার অংশগ্রহণই আমাদের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে।

Call-to-Action: বইমেলার এই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ সম্পর্কে জানুন এবং শেয়ার করে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ