28.1 C
Bangladesh
রবিবার, জুন ২২, ২০২৫
spot_img

শিল্পবর্জ্যের করাল গ্রাসে নদীর অস্তিত্ব সংকট: কীভাবে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাচ্ছে?

সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের নদীগুলো এখন শিল্পবর্জ্যের কারণে ভয়াবহ দূষণের শিকার। ডাইং কারখানার রঙিন রাসায়নিক বর্জ্য, সিমেন্ট কারখানার ধূলিকণা এবং স্থানীয় খোলা পায়খানার মল-মূত্র মিশে এই নদীগুলোর পানি আলকাতরার মতো কালো রঙ ধারণ করেছে। শুকনো মৌসুমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এই দূষণের ফলে জনজীবন এবং কৃষি কার্যক্রম ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফাতেমা জানান, আগে এই নদীগুলোর পানি ফসলের জমি সেচ এবং গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এখন এই দূষিত পানির দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায় হয়ে উঠেছে। দূষিত পানির কারণে ফসলের উৎপাদনও অর্ধেকে নেমে এসেছে।

ব্রহ্মপুত্রের দুঃখ: শিল্পকারখানার বিষাক্ত উপহার

ব্রহ্মপুত্র নদের ২৭ কিলোমিটার এলাকা প্রতিদিন প্রায় ৩৩ কোটি ঘনমিটার দূষিত পানি এবং ২৭০ ঘনফুট সরাসরি শিল্পবর্জ্যের শিকার। পাশাপাশি, স্থানীয় খোলা পায়খানার মাধ্যমে ৮৮৫ ঘনফুট পয়োবর্জ্য মিশে পানি ব্যবহারের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একসময় এই স্বচ্ছ পানির ব্রহ্মপুত্র কৃষিকাজ ও মৎস্যচাষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন সেই নদী তার জৌলুস হারিয়েছে।

চরপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ”আগে ব্রহ্মপুত্রের পানি দিয়ে সব কাজ করা যেত। এখন দূষিত পানির কারণে ফসলও ভালো হয় না। প্রতি বিঘায় যেখানে ৪৫ মণ ধান পেতাম, এখন মাত্র ২০ মণ পাই।”

দূষণের উৎস: শিল্পকারখানার বর্জ্য

মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, চৈতী কম্পোজিট, গ্যাস্টন ব্যাটারি কারখানা, বেঙ্গল, টাইগার সিমেন্টসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা তিন শতাধিক কারখানা তাদের অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলছে। এ ছাড়া পাশের আড়াইহাজার উপজেলার ডাইং কারখানাগুলো রাসায়নিক ও রঙিন পানি মিশিয়ে দূষণ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, কিছু কারখানা ইটিপি (Effluent Treatment Plant) চালানোর দাবি করলেও, বাস্তবে তা কার্যকর নয়। চৈতী কম্পোজিটের ম্যানেজার মিজানুর রহমান দাবি করেছেন, ”আমরা শোধনাগারে বর্জ্য শোধন করেই পানি খালে ফেলি।” তবে স্থানীয় বাসিন্দারা তার দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।

পরিবেশের ক্ষতি: কৃষি, মৎস্য ও জনস্বাস্থ্য

  1. কৃষি: দূষিত পানিতে এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেকের মতে, দূষণ অব্যাহত থাকলে একসময় কৃষিতে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।
  2. মৎস্য: দূষিত বর্জ্যের কারণে নদী ও খালের মাছের উৎপাদন প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। ডিমওয়ালা মাছগুলো দূষণের কারণে মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার।
  3. স্বাস্থ্য: দূষিত পানির কারণে তীরবর্তী এলাকার মানুষ খোস-পাঁচড়া, পানিবাহিত রোগসহ নানা সমস্যায় ভুগছে।

আন্দোলন ও প্রতিবাদ: কী হচ্ছে?

পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করলেও শিল্পমালিকদের প্রভাবের কারণে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। সংগঠনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ”আমরা সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রভাব এতটাই বেশি যে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

ভবিষ্যৎ কী?

নদী দূষণ রোধে শিল্পকারখানাগুলোর শোধনাগার কার্যকরভাবে পরিচালনার পাশাপাশি কঠোর আইন প্রয়োগ করা জরুরি। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এইচ এম রাশেদ জানিয়েছেন, তারা দূষণের বিষয়টি নজরে রেখেছেন এবং প্রমাণ পাওয়া মাত্র জরিমানা করছেন। তবে এই সাময়িক ব্যবস্থা কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারবে না।

সমাধানের পথে একধাপ এগিয়ে

  1. দূষণ রোধে কার্যকর শোধনাগার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
  2. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ পদক্ষেপ।
  3. জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় জনগণের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেওয়া।
  4. পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার উৎসাহিত করা।

পরিবেশ বাঁচাতে এগিয়ে আসুন!

আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। দূষণের এই ভয়াবহ প্রভাব সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে পোস্টটি শেয়ার করুন এবং আপনার মতামত জানান!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ