শাহ আরেফিন টিলা, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে অবস্থিত, একসময় পরিচিত ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পাথরের খনির জন্য। তবে বর্তমানে এটি অপরিকল্পিত এবং অবৈধ পাথর উত্তোলনের শিকার। এই ঘটনা শুধু স্থানীয় পরিবেশ ধ্বংস করছে না, বরং দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং পরিবেশ রক্ষার প্রচেষ্টায় বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরেফিন টিলায় অবৈধ পাথর উত্তোলন
শাহ আরেফিন টিলা: একটি পটভূমি
শাহ আরেফিন টিলা প্রাকৃতিক সম্পদের একটি ভাণ্ডার। এটি শুধু স্থানীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সিলেট অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে, কয়েক বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলো এই টিলার ওপর ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
পাথর লুটের ঘটনা: কী ঘটছে টিলায়?
সাম্প্রতিককালে, শাহ আরেফিন টিলায় পাথর উত্তোলন এবং টিলা কেটে ফেলার ঘটনায় ৪০ জনকে আসামি করে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করেছে। আরেফিন টিলায় অবৈধ পাথর উত্তোলন
কীভাবে পাথর লুট হচ্ছে?
স্থানীয় প্রভাবশালীরা শত শত শ্রমিককে টিলা কাটার কাজে নিয়োজিত করছে। দৃশ্যমান এবং রেকর্ডীয় টিলার অংশ কেটে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। পাথর উত্তোলনের পদ্ধতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যা শ্রমিকদের জীবনকেও বিপন্ন করছে।
মামলার বিবরণ:
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর অধীনে দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আরও ৩৯ জন অভিযুক্ত, যাদের অধিকাংশ স্থানীয় রাজনীতি এবং ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যে এই অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
পাথর উত্তোলনের প্রভাব:
পাথর উত্তোলনের ফলে টিলার আশেপাশের পরিবেশ দ্রুত ধ্বংস হচ্ছে। টিলার মাটি অপসারণের ফলে জমি ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে এবং ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
শাহ আরেফিন টিলায় পাথর লুটের ঘটনা শুধু স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং এটি একটি জাতীয় পরিবেশ সংকট।
বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস:
টিলার পরিবেশে থাকা গাছপালা এবং প্রাণীদের জন্য এই টিলা একটি প্রাকৃতিক আবাসস্থল। টিলা কেটে ফেলার ফলে তারা তাদের আশ্রয় হারাচ্ছে।
ভূমিধসের ঝুঁকি:
টিলা কেটে ফেলার ফলে মাটির স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে, যা ভূমিধস এবং বন্যার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
পানির স্তর কমে যাওয়া:
টিলার ধ্বংস প্রাকৃতিক জলাধারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর ফলে পানির স্তর কমে যাচ্ছে, যা কৃষি এবং পানির চাহিদায় প্রভাব ফেলছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর প্রভাব:
গাছপালা ধ্বংস এবং টিলার মাটি সরানোর ফলে স্থানীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বায়ু দূষণ বাড়ছে।
রাজনীতি এবং পরিবেশ: একটি দুষ্ট চক্র
অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। যদিও তারা দলের কোনো পদে নেই, তবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় তাদের অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধা সৃষ্টি করছে।
রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শ্রমিকদের ব্যবহার করে টিলা ধ্বংস করছে। প্রশাসনের দুর্বলতা এবং আইনের প্রয়োগের অভাবে তারা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা
পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিনে তদন্ত করে এই অবৈধ কার্যক্রমের সত্যতা পেয়েছে। তারা এই বিষয়ে দুটি পৃথক মামলা করেছে।
মামলার দিকনির্দেশনা:
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ধারা ৬(খ) লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
কী করা উচিত?
শাহ আরেফিন টিলা রক্ষায় প্রয়োজন সঠিক এবং কার্যকরী পদক্ষেপ।
কঠোর আইন প্রয়োগ:
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা পাথর লুটে জড়িত, তাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ:
স্থানীয় জনগণকে পরিবেশ রক্ষার কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের সচেতনতা এবং সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট সমাধান সম্ভব নয়।
পুনর্বাসন কার্যক্রম:
টিলার ধ্বংস হওয়া অংশ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। গাছ লাগানো এবং ভূমি পুনর্বাসনের মাধ্যমে টিলার পরিবেশ পুনরায় স্থিতিশীল করা সম্ভব।
বিকল্প কর্মসংস্থান:
স্থানীয় শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা পাথর উত্তোলনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত না হন।
শেষ কথা
শাহ আরেফিন টিলার ঘটনা আমাদের পরিবেশ রক্ষায় ব্যর্থতার একটি উদাহরণ। এটি শুধু একটি টিলা নয়, বরং আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বন্ধে আমাদের সক্রিয় হতে হবে।
👉 আপনার মতামত জানান:
পরিবেশ রক্ষায় আপনার কী পরামর্শ?
শাহ আরেফিন টিলা রক্ষায় আমরা কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারি?
📢 শেয়ার করুন এবং সচেতনতা বাড়ান। একসাথে আমরা পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে যেতে পারি।