হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট পৌরসভা, যা ২০১৫ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পেয়েছে, সেখানে এখনও কোনো বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন হয়নি। দীর্ঘ ১৯ বছরের পথচলায় পৌরবাসীর জন্য আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।
পৌরসভার প্রতিদিনের ৪-৫ টন বর্জ্য সরাসরি খোয়াই নদীতে ফেলা হয়, যা পরিবেশ দূষণ এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। মিঠা পানির দেশীয় মাছ যেমন কই, শিং, মাগুর, শোলসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে।
খোয়াই নদীর বর্তমান অবস্থা: ময়লার ভাগাড়ে পরিণত
চুনারুঘাট পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুরাতন খোয়াই নদীতে বর্জ্য ফেলে আসছেন। ১৮ বছরের ব্যবধানে এই নদী ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়। যদিও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে নদীটি পরিষ্কার করা হয়, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের অভাবে একই অবস্থা ফিরে এসেছে।
পরিবেশ বিপর্যয়ের আর্থ-সামাজিক প্রভাব
নদীতে বর্জ্য ফেলার ফলে শুধু পরিবেশ নয়, বরং স্থানীয় মানুষও স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছে। দূষিত পানি ব্যবহারে এলাকায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ এবং অন্যান্য রোগের প্রকোপ বেড়েছে। পাশাপাশি, নদী নির্ভর মৎস্যজীবীদের আয়ের পথ সংকুচিত হচ্ছে, যা তাদের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
পৌরসভার ব্যর্থতা ও সচেতন নাগরিকদের মতামত
২০০৫ সালে গঠিত চুনারুঘাট পৌরসভা এবং ২০১৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পরও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব কেন? সচেতন নাগরিকরা সাবেক মেয়রদের অদূরদর্শিতাকে এজন্য দায়ী করেছেন। তারা মনে করেন, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে বর্জ্য শোধনাগার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো।
পৌরবাসী দাবি করছেন, একটি স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন এবং আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণের মাধ্যমে রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এ উদ্যোগ পরিবেশ রক্ষা এবং স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি: কতটা কার্যকর হবে?
পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দের চেষ্টা চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়া এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, এখন প্রয়োজন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ।
পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব
পরিবেশ রক্ষায় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। খোয়াই নদীর দূষণ রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সচেতনতা এবং উদ্যোগ প্রয়োজন। এটি কেবল পরিবেশ নয়, বরং চুনারুঘাটের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য।
শেষ কথা
চুনারুঘাট পৌরসভায় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ শুধু একটি স্থানীয় প্রয়োজন নয়, এটি একটি জাতীয় দায়িত্বও বটে। সঠিক পরিকল্পনা এবং জনসচেতনতা দিয়ে আমরা পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে খোয়াই নদীকে রক্ষা করতে পারি।
আপনার মতামত দিন! খোয়াই নদীর দূষণ প্রতিরোধে কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনার মনে হয়? আপনার মতামত শেয়ার করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় আমাদের এই প্রচেষ্টায় অংশ নিন।
