শুষ্ক মৌসুমে ফুলজোড় নদী কেন এমন খরস্রোত বৃদ্ধি হয়ে উঠেছে?

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ফুলজোড় নদী এই শুষ্ক মৌসুমে একটি অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখাচ্ছে – নদীর সাধারণ ধীর প্রবাহ হঠাৎ করেই খরস্রোত হয়ে উঠেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নদীটির আচরণে এই অদ্ভুত পরিবর্তন পরিবেশের প্রতি আমাদের নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে। খরস্রোত বৃদ্ধি

নদীর স্রোতের অস্বাভাবিক পরিবর্তন

শুষ্ক মৌসুমে সাধারণত ফুলজোড় নদীর পানি কমে যায়, ফলে প্রবাহ খুবই ধীর হয়ে পড়ে। তবে সম্প্রতি নদীতে হঠাৎ করেই প্রবল স্রোত দেখা গেছে, যা স্থানীয়দের জন্য চরম বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু মানুষ ধারণা করছেন যে, উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে এই স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে, আবার অন্যরা মনে করছেন নদীতে খননযন্ত্র ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করার ফলস্বরূপ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নদীটি তাদের এলাকার গ্রামগুলিকে আলাদা করেছে। কিন্তু এবার নদীর স্রোতের কারণে নৌকা বা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। কেউ আগে এমন পরিস্থিতি দেখেননি। নদীর স্রোতের কারণে সাঁকো ভেঙে গিয়ে মানুষের চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় জীবিকা ও মৎস্যজীবীদের সমস্যা

ফুলজোড় নদীটি স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যেখানে তারা শীতকালে বাঁশের ফাঁদ দিয়ে মাছ ধরতে যান। কিন্তু এবারের স্রোত এত তীব্র যে, মাছ ধরার ফাঁদও ধ্বংস হয়ে গেছে। মৎস্যজীবীরা তাদের জাল ও ফাঁদ বাঁচাতে নদী থেকে সেগুলো তুলে ফেলছেন, কারণ স্রোতের কারণে মাছ ধরাও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

এ ধরনের অস্বাভাবিক নদীর স্রোত জলবায়ু পরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত হতে পারে। নদীর প্রবাহের এই পরিবর্তন শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং নদীখাতের পরিবর্তনের ফলস্বরূপ হতে পারে। বিশেষ করে নদীতে খননযন্ত্র ব্যবহার করা এবং বালু উত্তোলন পরিবেশের ভারসাম্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে, যা নদীর পানির প্রবাহ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যা স্থানীয়দের জন্য শুধুমাত্র পরিবহন নয়, বরং তাদের জীবনযাত্রার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিকার ও সতর্কতা

এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নদীর স্রোতের সঠিক কারণ খুঁজে বের করার জন্য পানিবণ্টন বোর্ড এবং পরিবেশগত কর্মকর্তা দিয়ে একটি তদন্ত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে, নদীতে অবৈধ খনন ও বালু উত্তোলন বন্ধ করা জরুরি। পরিবেশ রক্ষার জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নিতে হবে।

শেষ কথা

ফুলজোড় নদীর এই অস্বাভাবিক খরস্রোত আমাদের পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতন হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। নদী এবং অন্যান্য জলাশয়কে রক্ষা করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব।