25.8 C
Bangladesh
মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫
spot_img

পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় ৫০ দিনের আন্দোলন: উপদেষ্টারা কেন জনগণের কথা শুনছেন না?

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় ৫০ দিন ধরে চলছে আন্দোলন। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারণে পান্থকুঞ্জ পার্কের ধ্বংস ঠেকানো। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, সরকার এবং উপদেষ্টারা জনগণের কথা শুনছেন না। এই আন্দোলন শুধু একটি পার্ক রক্ষার লড়াই নয়, এটি পরিবেশ, নগর পরিকল্পনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত সংগ্রামের অংশ। পার্ক রক্ষায় ৫০ দিনের আন্দোলন

পান্থকুঞ্জ পার্ক: কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

পান্থকুঞ্জ পার্ক শুধু একটি সবুজ এলাকা নয়, এটি ঢাকা শহরের পরিবেশগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার একটি অপরিহার্য অংশ। এই পার্কটির গুরুত্ব নিম্নলিখিত দিকগুলো থেকে বিশ্লেষণ করা যায়:

১. পরিবেশগত গুরুত্ব

পান্থকুঞ্জ পার্কে রয়েছে শতাধিক গাছ, যা ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাছগুলি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে, যা শহরের বায়ুকে বিশুদ্ধ রাখে। এছাড়াও, এই পার্কটি শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ভূমিকা রাখে।

পান্থকুঞ্জ পার্কের জলাধার এবং সবুজ এলাকা শহরের বন্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পার্ক রক্ষায় ৫০ দিনের আন্দোলন

২. সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্ব

পান্থকুঞ্জ পার্ক এলাকাবাসীর জন্য একটি বিনোদন ও বিশ্রামের স্থান। এই পার্কে মানুষ প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে পারে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ পরিবেশ মানুষের মানসিক চাপ কমাতে এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, এই পার্কটি শিশুদের খেলাধুলা এবং পরিবারের সদস্যদের একসাথে সময় কাটানোর জন্য একটি নিরাপদ স্থান। এটি সামাজিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

৫০ দিনের আন্দোলন: কী দাবি আন্দোলনকারীদের?

বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্বে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাদের মূল দাবি হলো:

১. ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজ বাতিল করা।

২. পান্থকুঞ্জ পার্কের গাছ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা।

৩. প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করে পরিবেশগত সমীক্ষা করা, যেখানে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

উপদেষ্টাদের ভূমিকা: কেন জনগণের কথা শুনছেন না?

আন্দোলন শুরুর কিছুদিনের মধ্যে তিন উপদেষ্টা পান্থকুঞ্জ পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ৫০ দিন পার হলেও সেই আলোচনা এখনো হয়নি। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, উপদেষ্টারা জনগণের কথা শুনছেন না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরের সরকার, যারা নিজেদের জনমানুষের সরকার বলে, বিগত সরকারের স্বার্থের প্রকল্প বাতিলের কথা ছিল তাদের; কিন্তু সে উদ্যোগের লক্ষণ নেই।”

উপদেষ্টাদের এই নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আন্দোলনকারীদের মতে, উপদেষ্টারা জনগণের চেয়ে প্রকল্পের পেছনের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন। বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, “উপদেষ্টারা গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণ–আকাঙ্ক্ষার চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু তাঁদের আচরণে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।”

প্রকল্পের পেছনের স্বার্থ: কারা লাভবান হচ্ছে?

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানিগুলো মুনাফা করছে, কিন্তু এর সুফল পাবে স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারী। অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “এই প্রকল্প থেকে বিদেশি কোম্পানির মুনাফা হচ্ছে। আর সুফল পাবে স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারী।”

এছাড়াও, এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত পেশাজীবী, আমলা, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শায়ের গফুর বলেন, “এ ধরনের প্রকল্পে যুক্ত পেশাজীবী, আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীর ভূমিকা স্পষ্ট করতে হবে।”

এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ছোট গোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে, কিন্তু এর পরিবেশগত এবং সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক।

পরিবেশগত প্রভাব: কী হারাচ্ছে ঢাকা?

পান্থকুঞ্জ পার্ক শুধু গাছের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি একটি জলাধারও ছিল। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, “পান্থকুঞ্জ এলাকায় জলাধার ছিল। মানুষ এখানে সময় কাটাতে আসত। এই শহর থেকে শুধু গাছ না, জলাধারও হারিয়ে যাচ্ছে।”

ঢাকা শহর ইতিমধ্যেই বায়ুদূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস হলে এই সমস্যা আরও তীব্র হবে। গাছ এবং জলাধার হারানোর ফলে শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে, বায়ুদূষণ বাড়বে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাবে।

এছাড়াও, এই পার্কটি হারানোর অর্থ হলো ঢাকাবাসীর জন্য একটি প্রাকৃতিক স্যানেটারি হারানো। এটি শুধু পরিবেশগত ক্ষতি নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুস্থতার জন্যও একটি বড় ক্ষতি।

শেষ কথা: আমাদের ভূমিকা কী?

পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষার এই আন্দোলন শুধু আন্দোলনকারীদের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা যদি আজ চুপ করে থাকি, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ এবং টেকসই ঢাকা রেখে যেতে পারব না।

আপনিও এই আন্দোলনে যোগ দিন:

  1. আন্দোলনকারীদের সমর্থন করুন।
  2. সোশ্যাল মিডিয়ায় এই আন্দোলনের কথা শেয়ার করুন।
  3. স্থানীয় নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে আপনার মতামত পৌঁছে দিন।

#পান্থকুঞ্জ_পার্ক_রক্ষায়_আন্দোলন #গাছ_রক্ষা_আন্দোলন #পরিবেশ_রক্ষা #জলবায়ু_পরিবর্তন #ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ