জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) রবিবার ১৩টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যার মধ্যে পরিবেশ ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে উঠে এসেছে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ ব্যবস্থাপনা। মোট ১২ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি বিশেষভাবে আলোচিত, যা চতুর্থবারের মতো মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সুরক্ষায় আগ্রহী সাধারণ মানুষের জন্য এই সিদ্ধান্তগুলো কী বার্তা বহন করে? আসুন বিশদে জানা যাক। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
নারায়ণগঞ্জের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: স্থায়ী সমাধানের দিকে অগ্রগতি
একনেক সভায় সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের “কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ ব্যবস্থাপনা (২য় সংশোধিত)” প্রকল্প। শহুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের দুর্বলতা কাটাতে এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চতুর্থ দফায়। বর্জ্য অপসারণের আধুনিক প্রযুক্তি ও স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করাই এটির মূল লক্ষ্য। শহরাঞ্চলে দূষণ রোধ, মাটি ও পানির উৎসের সুরক্ষা এবং মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমাতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় একটি অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্র, যা কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে সহায়ক।
অন্যান্য প্রকল্প: অবকাঠামো উন্নয়ন ও টেকসই কৃষি
একনেকের অনুমোদন পাওয়া ১৩টি প্রকল্পের মধ্যে পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত আরও কয়েকটি উদ্যোগ রয়েছে। যেমন, চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী অঞ্চলের স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চীনের ঋণে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প, এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের “ধান, গম ও ভুট্টার উন্নত বীজ উৎপাদন” প্রকল্প। এছাড়া, বিদ্যুৎ খাতে কূপ খনন ও জরিপের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও এসব প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তবে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও পরিকল্পনা এগুলোর মধ্যেও উপস্থিত। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
অর্থায়নের হালচাল: সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব
১৩টি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসছে ৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ ৭ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য চীনের সহায়তায় মোংলা বন্দরের উন্নয়ন, যা আঞ্চলিক বাণিজ্য হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করবে। তবে, ঋণনির্ভর এই বিনিয়োগের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করাটাও চ্যালেঞ্জ।
পরিবেশ ও জলবায়ু সংকট: প্রকল্পগুলোর প্রাসঙ্গিকতা
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়াও অন্যান্য প্রকল্পের বেশ কয়েকটিতে পরোক্ষভাবে জলবায়ু সহনশীলতার বিষয়টি জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, “Food Safety Testing Capacity Development” প্রকল্পটি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে, যা চরম আবহাওয়া ও ফসল উৎপাদনে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি। অন্যদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনের মতো প্রকল্পগুলি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতনতায় শিক্ষিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে।
শেষ কথা: সচেতনতা ও অংশগ্রহণের আহ্বান
একনেকের এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে শহর ও গ্রামীণ অবকাঠামোর পাশাপাশি পরিবেশগত সুফলও পাওয়া যাবে। তবে, সফলতা নির্ভর করবে স্বচ্ছতা, তদারকি এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের ওপর। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে শুধু সরকারি পদক্ষেপই নয়, প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আপনার আশপাশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখুন, সবুজ উদ্যোগে অংশ নিন—প্রতিটি ছোট প্রচেষ্টাই পরিবেশ রক্ষায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ক্যাল টু অ্যাকশন: পরিবেশ সুরক্ষায় আপনার মতামত ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন নিচে কমেন্টে। এই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সবাইকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করুন!