21.5 C
Bangladesh
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
spot_img

গ্রিনহাউস গ্যাস নয়, পরিষ্কার বাতাসেই কি বিপদ লুকিয়ে?

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। জলবায়ু পরিবর্তনের এই তীব্র প্রভাব নিয়ে গবেষকরা বহুদিন ধরে কাজ করছেন, এবং তাদের গবেষণায় কিছু চমকপ্রদ বিষয় উঠে এসেছে। আমরা জানি যে, গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) পৃথিবীকে গরম করে, তবে এবার এক নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে যে, বায়ু দূষণ কমানোও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন জেমস হ্যানসেন, যিনি ১৯৮০-এর দশকে মার্কিন কংগ্রেসকে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। গ্রিনহাউস গ্যাসের আসল প্রভাব

হ্যানসেনের সতর্কতা: বায়ু দূষণ এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের সম্পর্ক

জেমস হ্যানসেন বলেন, “মানবজাতি একটি খারাপ চুক্তি করেছে, যেখানে আমরা বায়ু দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাবকে কমাতে এয়ারোসোল (বায়ু দূষণ সৃষ্টিকারী পদার্থ) ব্যবহার করেছিলাম, যা প্রায় অর্ধেক গ্রিনহাউস গ্যাসের উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল।” অর্থাৎ, আমরা যখন বায়ু দূষণ কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, তখন তা গ্রিনহাউস গ্যাসের উষ্ণায়নের প্রভাব কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিল।

তবে এখন, যখন বায়ু দূষণ কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তখন সেই ঠান্ডা প্রভাব কমে যাওয়ায় পৃথিবী আরও গরম হয়ে উঠছে। এর ফলে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যতটা তীব্র ছিল, তা আরও দ্রুত হতে পারে, যা ভবিষ্যতে জলবায়ু সংকটকে আরো খারাপ করে তুলবে। গ্রিনহাউস গ্যাসের আসল প্রভাব

বায়ু দূষণ কমানোর পরিণতি: ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের তাপমাত্রা বৃদ্ধি

বিজ্ঞানীরা ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য সঠিক কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। বিশেষভাবে, বায়ু দূষণ কমানোর কারণে তাপমাত্রার অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটছে। হ্যানসেন এবং তার সহকর্মীরা যে বিশ্লেষণ করেছেন, তা বলছে যে বায়ু দূষণ কমানোর পর পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার অনেক বেড়ে গেছে। তাদের মতে, এই বৃদ্ধির পেছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে সমুদ্র পরিবহন খাতের অতি ক্ষতিকর সালফারের মাত্রা কমিয়ে দেওয়ার কারণে যে পরিমাণ বায়ু দূষণ কমেছে, তা বিশ্ব তাপমাত্রায় এক বিশাল প্রভাব ফেলেছে।

২০২০ সালের শিপিং ফুয়েল নিয়ন্ত্রণ: এক অপ্রত্যাশিত পরীক্ষা

২০২০ সালে একটি আন্তর্জাতিক নিয়ম চালু হয়, যার মাধ্যমে শিপিং ফুয়েলের মধ্যে সালফারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। এই আইন পরিবর্তন বিশ্বের সমুদ্র এলাকায় বায়ু দূষণের পরিমাণ হঠাৎ করে কমিয়ে দেয়। এটি প্রকৃতপক্ষে এক অপ্রত্যাশিত পরীক্ষা হয়ে ওঠে, যেখানে গবেষকরা দেখতে পান যে, সমুদ্রের উপকূলে বায়ু দূষণের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে সূর্যের তাপ পৃথিবীতে আরও বেশি প্রবাহিত হচ্ছে। এই ঘটনা বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে তারা আরো ভালোভাবে বুঝতে পারছেন যে বায়ু দূষণ কমানোর ফলে কীভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গবেষকরা এর মাধ্যমে একটি অনুমান করেছেন যে, ২০২০ সালে শিপিং দূষণ কমানোর ফলে প্রতি বর্গমিটার এলাকায় ০.৫ ওয়াট তাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমানে বৈশ্বিক কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমনের মতো এক দশকের গরমের প্রভাবের সমান।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য এই বায়ু দূষণ কমানো কি দায়ী?

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, বায়ু দূষণ কমানোর ফলে উষ্ণায়ন হয়েছে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে শুধুমাত্র বায়ু দূষণই এর একমাত্র কারণ। অন্যান্য কিছু প্রভাব যেমন প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রার পরিবর্তনও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, এই পুরো বিষয়টি এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি এবং এ বিষয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।

এছাড়া, কিছু গবেষক এই ধারণাকে অতিরঞ্জিত মনে করছেন এবং বলছেন যে, অন্যান্য কারণ যেমন চীন থেকে বায়ু দূষণের কমে যাওয়াও এই প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

জলবায়ু সংকটের জন্য আমাদের প্রস্তুতি

হ্যানসেন এবং তার সহকর্মীরা সতর্ক করেছেন যে, বায়ু দূষণ কমানোর পরিণতিতে পৃথিবী আরও গরম হতে শুরু করেছে এবং এর প্রভাব অনেক বেশি তীব্র। তারা বিশ্বাস করেন যে, এর ফলে পৃথিবী জলবায়ু সংকটের আরও কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে, এমনকি একেবারে গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তন সূচক, যেমন আটলান্টিক মহাসাগরের প্রবাহ এবং পশ্চিম অ্যান্টার্কটিক বরফের গলে যাওয়ার মতো ঘটনা দ্রুত এগিয়ে আসতে পারে।

তারা মনে করেন যে, পৃথিবীকে ঠান্ডা রাখার জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া উচিত যেমন, সৌর জিওইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা।

বিজ্ঞানীদের মতামত: অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন

তবে, এই বিশ্লেষণটি অত্যন্ত তর্কযোগ্য এবং এর মধ্যে কিছু বড় ভিন্নমত রয়েছে। যেমন, অন্য বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, বায়ু দূষণ পরিবর্তন ছাড়া অন্যান্য প্রভাব যেমন প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবর্তনও এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

তাদের মতে, এই বিষয়টির ওপর আরও কাজ করার প্রয়োজন, যাতে একে আরও ভালোভাবে বোঝা যায় এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

শেষ কথা

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে এক নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। যদিও বায়ু দূষণ কমানোর ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হচ্ছে, তবে এর সাথে অন্য অনেক অজানা কারণও জড়িত রয়েছে। এই বিষয়টি আমাদের আরও গভীরভাবে বুঝতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করা সহজ হয়।

আপনি কি মনে করেন? এই বিষয়ে আপনার চিন্তা কমেন্টে শেয়ার করুন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ