বাংলাদেশের ইসলামপুর উপজেলায় নির্মিত ৩৭ লাখ টাকার সেতুটি, যা এক বছরেও কোনো কাজে আসেনি, প্রশ্ন উঠিয়েছে কীভাবে সরকারী অর্থ অপচয় হচ্ছে। ইসলামপুর পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত এই সেতু খালের মাঝে, যেখানে কোনো সড়ক বা বসতি নেই, তাও আবার চলাচলের জন্য পূর্বের সেতু বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও। এটি সাধারণ মানুষদের জন্য স্বাভাবিকভাবে অপ্রয়োজনীয় হলেও, সেতুটি নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়েছে। সেতুটি কোথায়, কেন, কিভাবে এবং কেন কাজে আসেনি—এগুলোর উত্তর খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৩৭ লাখ টাকার সেতু
ইসলামপুর পৌরসভার তৃতীয় সেতুর অব্যবহারিতা
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় আলাই খালের মাঝে নির্মিত এই সেতুর কোনো বাস্তব ব্যবহার নেই। সেখানে আগের থেকেই বড় একটি সেতু ছিল এবং বর্তমানে ওই এলাকায় সড়ক কিংবা জনবসতি নেই। অথচ, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু একদিনও ব্যবহৃত হয়নি। ইসলামপুর পৌরসভার অভিযোগ রয়েছে যে সেতু নির্মাণের সময় পরিকল্পনার অভাব ছিল এবং অন্য জরুরি উন্নয়ন কাজের চেয়ে এটির নির্মাণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন যে, এই সেতু নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল না শুধু অব্যবহৃত একটি স্থানে সেতু তৈরি করা, বরং এখানে লক্ষ করা উচিত যে এই নির্মাণ প্রকল্পটি দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। ৩৭ লাখ টাকার সেতু
গাফিলতির কারণে সেতু নির্মাণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা
এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণের প্রকল্পগুলো সরকারের দুর্নীতি ও অকার্যকর পরিকল্পনা ব্যবস্থার প্রতিফলন হতে পারে। স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দাদের অভিযোগ রয়েছে যে, এই ধরনের সেতু নির্মাণে কাজ না হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এবং এটি সরাসরি জনগণের অর্থ লোপাটের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া, সেতু নির্মাণের পরেও রাস্তার সংযোগ স্থাপনের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বসতবাড়ি বা ক্ষেত-খামারের পাশাপাশি সেতুর কোনো ব্যবহার নেই, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। প্রশাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের কাছে কিছু সমস্যার কারণ ছিল, যেমন সেতু নির্মাণের সময় মাটি ধুয়ে চলে গিয়েছিল। তবে, এটি তদন্তের বিষয় এবং খোলাসা হওয়া উচিত যে কি কারণে সেতু সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকল্পের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব
৩৭ লাখ টাকা খরচ করে যে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তা শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের টাকাও অপচয় করা হয়েছে। যখন সরকারের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পরিবেশ রক্ষার প্রতি এক নতুন দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন, তখন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের জন্য খরচ করা অর্থ সেই প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের প্রকল্পগুলো পরিবেশগতভাবেও ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন—খালের মাঝে সেতু নির্মাণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলাশয়ের মাঝে উন্নয়ন কার্যক্রমে বিরোধ দেখা দিতে পারে, যা প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে ভবিষ্যতের পরিকল্পনায়
এ ধরনের নির্মাণের সাথে যুক্ত দুর্নীতি ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো দেশে দুর্নীতির প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। এটি সরকারের সক্ষমতা এবং পরিকল্পনার অসংলগ্নতা এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ের স্বীকারোক্তি। শাসন ব্যবস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উচিত এসব প্রকল্পে দৃষ্টি দেওয়া এবং অবিলম্বে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
উপসংহার: অর্থের অপচয় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি
এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থ অপচয়কারী প্রকল্পগুলো আমাদের দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ এবং সমাজে ক্ষতির কারণ হতে পারে। দুর্নীতি বন্ধ করতে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে জনগণের সচেতনতা জরুরি। এধরনের অব্যবহৃত প্রকল্পের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা না থাকলে ভবিষ্যতে আরো বেশি খরচ বৃদ্ধি এবং জনগণের সম্পদ ক্ষতি হতে পারে।