25.6 C
Bangladesh
বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫
spot_img

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কেন বলছেন সামাজিক বনায়ন যথেষ্ট নয়?

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ ধ্বংসের হুমকি মোকাবিলায় বর্তমান সময়ে ব্যাপক উদ্যোগের প্রয়োজন। বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ইনডিজিনাস প্লান্টস ফর সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট’ শীর্ষক উদ্ভিদবিজ্ঞান সম্মেলনে ভার্চুয়াল বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে বনাঞ্চল সংরক্ষণ, সামাজিক বনায়ন, এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব সহকারে উঠে এসেছে। এই লেখায় তাঁর বক্তব্য এবং সম্মেলনের আলোচনাগুলোর বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন

বিপন্ন বনাঞ্চল রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দুইশোর বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনের টেকনিক্যাল সেশনে বিভিন্ন গবেষক তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের বনাঞ্চল রক্ষায় সরকারিভাবে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষত শালবন পুনরুদ্ধারে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। তবে, তাঁর মতে, “সরকারিভাবে আরও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বনায়ন প্রকল্পে দেশীয় গাছ রোপণের পাশাপাশি, এগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”

সরকারের এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো দেখালেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃতির প্রতি আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন

প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব: সামাজিক বনায়ন বনাম প্রাকৃতিক বন

সামাজিক বনায়ন একটি কার্যকর উদ্যোগ হলেও, এটি প্রাকৃতিক বন রক্ষার বিকল্প হতে পারে না। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জোর দিয়ে বলেন, “সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বন পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।” দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে সামাজিক বনায়নের কারণে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়েছে বলে অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে। তিনি সতর্ক করেছেন, কোনো বনায়ন প্রকল্পের কারণে যেন প্রাকৃতিক বন ধ্বংস না হয়।

তিনি আরও বলেন, “শুধু দেশীয় গাছ রোপণ করলেই হবে না, সেগুলো টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।” এ জন্য স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে এবং বন ব্যবস্থাপনায় তাঁদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

নগরায়নের প্রভাব ও সবুজায়নের প্রয়োজনীয়তা

ঢাকা ও অন্যান্য শহরের নগরায়ন পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান উল্লেখ করেছেন, “অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে অনেক মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। একসময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শাল গাছের প্রাচুর্য এবং বন্যপ্রাণীর বিচরণ ছিল। এখন এই পরিবেশ আর নেই।”

নগরায়নের কারণে দ্রুত সবুজায়ন হারিয়ে যাচ্ছে, যা শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। এই সমস্যার সমাধানে পরিকল্পিত সবুজায়ন ও আরবান ফরেস্ট্রি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সাংবিধানিক অঙ্গীকার

বাংলাদেশের সংবিধানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের অঙ্গীকার রয়েছে। তবে বাস্তবায়নে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, “অবৈধ দখলমুক্ত করে বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে হবে। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বন উজাড় হলে, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সঙ্গে সঙ্গে বৃক্ষরোপণ নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি বলেন, “ঢাকা শহরসহ দেশের নগর এলাকায় পরিকল্পিত সবুজায়ন জরুরি। শুধু উন্নয়নের দিকে মনোযোগ না দিয়ে, পরিবেশগত দিকগুলোও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।”

সম্মেলনের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও গবেষণা উপস্থাপিত হয়েছে। সম্মেলনের সভাপতি অধ্যাপক এম. আজিজুর রহমান বলেন, “বিপন্ন বনাঞ্চল রক্ষার জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বন শুধু বিনোদনের স্থান নয়, এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এই ধরনের উদ্যোগে আরও উদ্ভাবনী সমাধান আসতে পারে।

পরিবেশ রক্ষায় আমাদের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকার বা বিশেষজ্ঞদের নয়; সাধারণ মানুষকেও এর অংশ হতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তি ও পরিবার তাদের জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তন এনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন:

  1. গাছ রোপণ করা এবং পরিচর্যা করা।
  2. প্লাস্টিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহার করা।
  3. বনাঞ্চলে বেড়াতে গেলে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
  4. পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে সচেতন হওয়া এবং অন্যদের সচেতন করা।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের মতে, “জনগণের মধ্যে বোটানিক্যাল গার্ডেনের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। এটি শুধু বিনোদনের স্থান নয়, প্রকৃতি সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।” তাই সবাই মিলে উদ্যোগ নিলেই পরিবেশ রক্ষায় সত্যিকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব।

উপসংহার

বিপন্ন বনাঞ্চল রক্ষা এবং পরিবেশ টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এবং সাধারণ জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের মতে, বন রক্ষার জন্য শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়নও জরুরি। আমাদের সকলে মিলে সচেতনভাবে পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা যায়।

আপনার মতামত শেয়ার করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ