25.7 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুলাই ১১, ২০২৫
spot_img

কমার্শিয়াল ট্যুরিজম ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ধাক্কায় সুন্দরবন

সুন্দরবন আমাদের দেশের একটি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি শুধুমাত্র জীববৈচিত্র্যের আধার নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান সময়ে সুন্দরবন দুটি বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে—একটি প্রাকৃতিক এবং অন্যটি মনুষ্যসৃষ্ট। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততার বৃদ্ধি ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, ইকো ট্যুরিজমের নামে বাণিজ্যিক ট্যুরিজম সুন্দরবনের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ধাক্কায় সুন্দরবন বিপন্ন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: লবণাক্ততা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি

লবণাক্ততার বৃদ্ধি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের নদী ও মাটির লবণাক্ততা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রবাহিত লবণাক্ত পানি শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টি পানির অভাব সৃষ্টি করছে, যা সুন্দরবনের সুন্দরী ও গেওয়া গাছের মতো গাছপালার বৃদ্ধি ব্যাহত করছে।

লবণাক্ততার প্রভাব শুধু উদ্ভিদেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি জলজ প্রাণী এবং বন্যপ্রাণীর জীবনচক্রেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। উদাহরণস্বরূপ, মিঠা পানির উপর নির্ভরশীল মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী হ্রাস পাচ্ছে, যা পুরো খাদ্যশৃঙ্খলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ধাক্কায় সুন্দরবন বিপন্ন

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি

জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি বড় প্রভাব হল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। সুন্দরবনের নিম্নভূমি ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছে, যার ফলে বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে। বিশেষত, সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চল এই সমস্যার মুখে বেশি পড়েছে, যেখানে ভূমি হারানোর হার তুলনামূলক বেশি।

ইকো ট্যুরিজমের নামে কমার্শিয়াল ট্যুরিজমের হুমকি

পর্যটন থেকে উদ্ভূত পরিবেশগত ঝুঁকি

সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ইকো ট্যুরিজমের নামে পর্যটন কার্যক্রম বাড়ছে। যদিও এটি রাজস্ব আয়ের একটি উৎস, কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটন কার্যক্রম পরিবেশের উপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

  1. পর্যটকরা যত্রতত্র প্লাস্টিক ও পলিথিন ফেলছেন, যা বনাঞ্চলে প্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করছে। এই মাইক্রো-পলিথিন সুন্দরবনের জলজ প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে তাদের জীবনচক্র কমিয়ে দিচ্ছে।
  2. বিষ দিয়ে মাছ ধরা এবং গাছগাছালি কেটে নেওয়া বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে।

বায়োডাইভারসিটির ক্ষতি

অতিরিক্ত পর্যটন সুন্দরবনের খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থলে আলো এবং উচ্চশব্দের কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

পর্যটনকেন্দ্রিক স্থাপনার হুমকি

সুন্দরবনের সীমানার কাছাকাছি গড়ে ওঠা অসংখ্য রিসোর্ট এবং কংক্রিটের স্থাপনা বনাঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করছে। রাতের বেলার আলো এবং উচ্চশব্দের গান পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

আধুনিক ও বাস্তবসম্মত বন সংরক্ষণ নীতিমালা

গবেষকদের মতে, সুন্দরবনের সুরক্ষার জন্য আধুনিক ও বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। বাঘ, হরিণ, বানর, কুমিরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুরক্ষার জন্য পৃথক পরিকল্পনা থাকতে হবে।

পর্যটন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ

সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করতে হবে এবং পর্যটকদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা

স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে বন সংরক্ষণের কাজে অংশগ্রহণ করাতে হবে। তাদের জীবিকা বননির্ভর হলেও তা যেন বনাঞ্চলের ক্ষতি না করে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার।

প্লাস্টিক ও বিষমুক্ত সুন্দরবন

বনে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, বিষ দিয়ে মাছ ধরা এবং বন্যপ্রাণী শিকার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

শেষ কথা: সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে

সুন্দরবন রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটি শুধুমাত্র একটি বন নয়; এটি আমাদের জীবনের অংশ। জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট হুমকির হাত থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে সরকার, পরিবেশবিদ, এবং সাধারণ জনগণকে একত্রে কাজ করতে হবে।

আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না! সুন্দরবন রক্ষায় আপনি কী উদ্যোগ নিতে চান? নিচের মন্তব্যে শেয়ার করুন এবং এই পোস্টটি ছড়িয়ে দিন, যাতে সচেতনতা আরও বাড়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ