উদ্ধার অভিযান ও সাফারি পার্কে স্থানান্তর
দিনাজপুরের জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্র ‘স্বপ্নপুরী‘ থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচটি এশীয় কালো ভালুকের নতুন ঠিকানা হলো গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বিশেষ অভিযানে এ ভালুকগুলোর সঙ্গে আরও ৪৩টি বন্য প্রাণী উদ্ধার করা হয়, যাদের মধ্যে কয়েকটি পাঠানো হয়েছে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। স্বপ্নপুরী পার্ক থেকে উদ্ধার
উদ্ধারের পর ভালুকগুলোকে সাফারি পার্কে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিন সপ্তাহ পর তাদের সেখানকার ভালুক বেষ্টনীতে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তবে পাঁচটির মধ্যে একটি ভালুক অসুস্থ, যার চিকিৎসা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
এশীয় কালো ভালুক: সংকটাপন্ন এক প্রজাতির জীবনযুদ্ধ
বাংলাদেশে এশীয় কালো ভালুক এখন মহাবিপন্ন প্রজাতির তালিকায়। মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বেশি দেখা গেলেও বাংলাদেশে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। অবৈধ শিকার, বন ধ্বংস ও অবৈধ বন্য প্রাণী ব্যবসার কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এমন বাস্তবতায় ভালুকগুলোর উদ্ধার ও সুরক্ষিত পরিবেশে স্থানান্তর অবশ্যই ইতিবাচক উদ্যোগ। স্বপ্নপুরী পার্ক থেকে উদ্ধার
বন্য প্রাণীর অবৈধ সংরক্ষণ: কী বলছে আইন?
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২ অনুযায়ী, অনুমোদন ছাড়া কেউ বন্য প্রাণী সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা প্রদর্শন করতে পারবে না। স্বপ্নপুরী পার্ক কর্তৃপক্ষ অনুমতি ছাড়াই এই ভালুকসহ আরও ৭৪টি বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করছিল। প্রশাসন আগেই ২৬ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে ৭৪টির মধ্যে ৫২টি পার্ক কর্তৃপক্ষের জিম্মায় রাখে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগের বৈধ কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১২ ফেব্রুয়ারির অভিযানে অবশিষ্ট প্রাণীগুলোও উদ্ধার করা হয়।
বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাদিক জানিয়েছেন, স্বপ্নপুরী পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রশ্ন থেকে যায়: বিনোদন পার্কে বন্য প্রাণী রাখা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য?
এ ঘটনাটি আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে—বিনোদন পার্কে বন্য প্রাণী রাখা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? অনেক পার্কেই অবৈধভাবে প্রাণীদের আটকে রাখা হয়, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে। পর্যাপ্ত খাবার, চিকিৎসা ও উপযুক্ত পরিবেশ ছাড়া এ ধরনের পশুপাখি দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না।
বিশ্বব্যাপী বন্য প্রাণী সংরক্ষণবাদীরা দাবি করেন, বিনোদনের জন্য নয়, বন্য প্রাণীদের তাদের স্বাভাবিক পরিবেশেই বাঁচতে দেওয়া উচিত। সাফারি পার্ক বা অভয়ারণ্যে স্থানান্তর এ সমস্যার একটি সমাধান হলেও দীর্ঘমেয়াদীভাবে আমাদের প্রকৃত পরিবেশ সংরক্ষণের ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিবেশ রক্ষায় আরও কী করা দরকার?
এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। শুধুমাত্র ভালুক উদ্ধার করাই যথেষ্ট নয়, বরং বন্য প্রাণী সংরক্ষণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
✔️ অবৈধভাবে বন্য প্রাণী সংগ্রহ ও প্রদর্শনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর আইন প্রয়োগ প্রয়োজন।
✔️ বন্য প্রাণীদের স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে দিতে পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করা দরকার।
✔️ সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
শেষ কথা
স্বপ্নপুরী থেকে উদ্ধার হওয়া ভালুকগুলোর নতুন আশ্রয় হলেও, এটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। প্রকৃতি ও প্রাণীদের প্রতি আমাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। আপনার এলাকায় এমন কোনো অবৈধ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বা শোষণের ঘটনা কি ঘটছে? মতামত জানান কমেন্টে! পরিবেশ রক্ষায় একসঙ্গে এগিয়ে চলি।