সেন্ট মার্টিন, দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ, বর্তমানে পর্যটকশূন্য অবস্থায় পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মধ্য দিয়ে নতুন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। পর্যটকদের আগমন বন্ধ থাকায়, দ্বীপের পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত মাসব্যাপী এই কর্মসূচির নাম ‘ক্লিন-আপ প্রোগ্রাম’। মাসব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান
পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অগ্রগতি
এই কর্মসূচির প্রথম পর্বে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যালায়েন্সের (বিএসএ) যৌথ উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়। এতে গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিনে দ্বীপ থেকে ৪১০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন, প্লাস্টিকের কাপ, পানির বোতল, প্লাস্টিক স্ট্র, টুথপেস্ট ও শ্যাম্পুর প্যাকেটসহ বিভিন্ন দূষণকারী উপাদান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রশাসনিক উদ্যোগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে, ২৬৬ স্বেচ্ছাসেবক দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। মাসব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন জানিয়েছেন, পর্যটকদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে সাইনবোর্ড স্থাপন ও গ্রাফিতি অঙ্কনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার রাখার জন্য ১০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ৬ জন লাইফগার্ড সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
প্লাস্টিক দূষণ রোধে গৃহীত পদক্ষেপ
গত দুই মাসে দ্বীপ থেকে ১৪.৩ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। টেকনাফের জাহাজঘাট থেকে ২৪১ কেজি প্লাস্টিক ও ৮৭ কেজি পলিথিন অপসারণ করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ দ্বীপের প্রবালপ্রাচীর ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক হবে।
পর্যটক নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তন
সরকারি নির্দেশনায়, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে পর্যটকের সংখ্যা দৈনিক সর্বোচ্চ ২০০০-এ সীমিত রাখা হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটক প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, যা দ্বীপের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত নিয়মাবলী কঠোরভাবে প্রয়োগ, প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
উপসংহার
পর্যটকশূন্য সেন্ট মার্টিনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান দ্বীপের দীর্ঘস্থায়ী পরিবেশ সংরক্ষণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমরা সবাই যদি সচেতনভাবে কাজ করি, তবে প্রকৃতি আমাদের জন্য তার সৌন্দর্য ধরে রাখবে। আসুন, আমরা সবাই পরিবেশবান্ধব জীবনধারা গড়ে তুলি এবং সেন্ট মার্টিনসহ দেশের অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসি।
আপনার মতামত জানান! পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আপনি কী উদ্যোগ নিতে চান? মন্তব্যে শেয়ার করুন!