বাংলাদেশের তিস্তা নদী, উত্তরাঞ্চলের মানুষদের জন্য এক জীবনের মতো। তবে নদীটির পানি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বৈষম্যের কারণে এক চরম দুর্দশা পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তিস্তা নদী নিয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা জনগণের ক্ষোভকে নতুন করে উস্কে দিয়েছে। এরই মধ্যে, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলন শুরু করেছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই
তিস্তা নদী এবং তার গুরুত্ব: তিস্তা নদী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদী, যার পানি কৃষি এবং জনজীবনের জন্য অপরিহার্য। তবে ভারত-বাংলাদেশের পানি চুক্তির অভাবে, তিস্তার পানি বণ্টন একাধিকবার বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে এই নদীর পানি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, যার ফলে কৃষি কাজ এবং সাধারণ জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই
তিস্তা মহাপরিকল্পনা: চীন সরকারের সহায়তায় ২০১৬ সালে তিস্তা নদীর জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যেখানে নদীর প্রস্থ কমিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার করার পরিকল্পনা ছিল। তাছাড়া, নদীটির দুই পাশে প্রশস্ত রাস্তা, গাইড বাঁধ, পর্যটন কেন্দ্র, এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কথা ছিল, যা লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারতো। কিন্তু, এখন পর্যন্ত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি, যার কারণে স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিরক্তি এবং হতাশা বাড়ছে।
বর্তমান আন্দোলন: ২০১৩ সালের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বিতরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব অব্যাহত। বিশেষ করে নদী এলাকার মানুষগুলো বছরের পর বছর ধরে পানি সংকটের শিকার। তারা দাবি করছে, তিস্তা নদীর পানি ব্যবহারে ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে এবং প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তারা জানাচ্ছে, বর্তমান সরকার এবং এর পূর্ববর্তী সরকার দুটি সাথেই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষা করেছে।
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির আওতায়, আগামী ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা এবং কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর ১১টি পয়েন্টে লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হয়ে ৪৮ ঘণ্টার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে। এই কর্মসূচি কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও তিস্তা পানি সংকটের বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করবে।
তিস্তা নদী রক্ষার এই আন্দোলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
তিস্তা নদী কেবল কৃষক কিংবা নদীপাড়ের মানুষের জন্য নয়, এটি বাংলাদেশের পরিবেশ এবং জলবায়ু ব্যবস্থার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীটির শুষ্কতা এবং পানি সংকট বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দেয়, যা পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: যদিও তিস্তা নদী নিয়ে আশা জাগানো পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক বাধাগুলির কারণে তা এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। সরকার এবং ভারত সরকারের মধ্যে চুক্তির অভাব এবং বাংলাদেশ সরকারের অব্যবস্থাপনা সেই আশা ধ্বংস করেছে। এর ফলে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ তাদের দাবি সামনে নিয়ে আসতে চায় এবং জলবায়ু সংকটের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরতে চায়।
শেষ কথা: তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন দেশের জলবায়ু এবং পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হতে পারে। তিস্তার পানি বিতরণ এবং এর সুরক্ষা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জনগণের জন্য জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময় এসেছে, সরকার এবং স্থানীয় জনগণ একত্রিত হয়ে এই সমস্যা সমাধান করবে। এখন দেখার বিষয় হলো, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচি কি আদৌ কোনো ফলাফল দিতে সক্ষম হয়।
Call-to-Action: আপনি কি তিস্তা নদী এবং এর পানি সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন? আপনার মতামত এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।
#TistaRiver #ClimateChange #WaterManagement #EnvironmentalProtection #Bangladesh #TistaMovement #SaveTista