হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাটিয়াজুড়ি বাজারে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার একটি মেছো বিড়াল উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় জনতা যখন প্রাণীটিকে দেখতে পায়, তখন তারা ভয় পেয়ে তা ধাওয়া করে। মেছো বিড়ালটি পিছু হটতে হটতে একটি গাছে উঠে যায়। তবে, এরপর জনতা বিড়ালটিকে গাছ থেকে নামিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এর পর স্থানীয় এক ব্যক্তি এই ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে দেন কালেঙ্গা ফরেস্টের রেঞ্জার মাসুদুল আলমকে। চুনারুঘাটে মেছো বিড়ালের উদ্ধার
প্রাণীটির ওপর এমন আচরণ দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে বন বিভাগের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং তাদের নেতৃত্বে সাতছড়ি ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগের রেঞ্জার মামুনুর রশিদ তার দলের সঙ্গে মেছো বিড়ালটিকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকারীরা জানান, আহত বিড়ালটি বর্তমানে সাতছড়ি উদ্যানে রাখা হয়েছে, যেখানে এর চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
এবং পশু পাখি রেসকিউ সেন্টারে যত্ন
সাতছড়ি রেঞ্জের রেঞ্জার মামুনুর রশিদ জানান, মেছো বিড়ালটি আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও, তাকে সুস্থ করার জন্য রেসকিউ সেন্টারে বিশেষ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। “এখন পর্যন্ত প্রাণীটি চিকিৎসাধীন এবং আমরা আশা করি এটি সুস্থ হয়ে উঠবে,” বলেন রেঞ্জার মামুনুর। তিনি আরও জানান, “এটি পুরোপুরি সুস্থ হলে আমরা মেছো বিড়ালটিকে সাতছড়ি উদ্যানে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো, যাতে তা স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসে।”
মেছো বিড়াল (Prionailurus mephitis) বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি। এটি ছোট আকারের একটি শিকারি প্রাণী যা মূলত রাতের বেলা শিকারের জন্য বের হয়। প্রাকৃতিক বাসস্থানে এই প্রাণীটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পরিবেশে এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে, এই ধরনের বন্যপ্রাণীকে মানুষের অজ্ঞতা বা নিষ্ঠুরতা থেকে বাঁচানো প্রয়োজন। চুনারুঘাটে মেছো বিড়ালের উদ্ধার
প্রাণীটির প্রতি মানুষের অমানবিক আচরণ
এ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয়দের মধ্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। মেছো বিড়ালের মতো বন্যপ্রাণীকে নির্যাতন বা তাদের ক্ষতি করার ঘটনা কেবল তাদের জীবন ও পরিবেশের জন্যই বিপজ্জনক নয়, বরং এটি পরিবেশগত ভারসাম্যও নষ্ট করতে পারে।
প্রাণীটির উপর জনতার আক্রমণ এবং তার পরবর্তী চিকিৎসার প্রক্রিয়া দেখে এটি স্পষ্ট যে, পরিবেশ সচেতনতা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতি যেন আর না ঘটে, সেজন্য সাধারণ জনগণকে একত্রিত হয়ে এসব প্রাণীকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণে সকলের ভূমিকা
এ ধরনের ঘটনাগুলি শুধু একটি প্রাণীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং পরিবেশের ভারসাম্য এবং দেশের জীববৈচিত্র্যকেও হুমকির মুখে ফেলে। মেছো বিড়ালের মতো বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করতে হলে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে এবং তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মেছো বিড়ালের উদ্ধার এবং তার চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি তারা স্থানীয় জনগণের মধ্যে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। “এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আরও বেশি করে সচেতনতা কর্মসূচি চালাবো, যাতে স্থানীয় জনগণ প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সাহায্য করতে পারে,” বলেন মামুনুর রশিদ।
প্রত্যাশিত পদক্ষেপ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি
এখন সময় এসেছে, আমরা সবাই আমাদের পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণীর রক্ষা বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হবো। আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে। এই ধরনের ঘটনা আমাদের সকলকে মনে করিয়ে দেয় যে, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বন্যপ্রাণী আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য অমূল্য রত্ন। তাদের সুরক্ষা আমাদের দায়।
প্রাণীটির দ্রুত সুস্থতা কামনা করে, আমরা সবাই যদি এই সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হই, তবে এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না।
আপনার এলাকার বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করতে আপনার ভূমিকা কী? মন্তব্যে জানাতে ভুলবেন না।
#চুনারুঘাট #মেছো_বিড়াল #বন্যপ্রাণী_সংরক্ষণ #পরিবেশ #জলবায়ু #সতর্কতা