হাইক্কার খালের গুরুত্ব ও বর্তমান অবস্থা
রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খাল ও জলাশয় সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। মোহাম্মদপুরের বছিলা হয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হাইক্কার খাল একসময় বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। কিন্তু দখল, দূষণ ও অব্যবস্থাপনার ফলে এটি কার্যত অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এই গুরুত্বপূর্ণ জলধারা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছে, যা নগরবাসীর জন্য একটি আশাব্যঞ্জক সংবাদ। পরিবেশ রক্ষায় ডিএনসিসির অভিযান
ডিএনসিসির উদ্ধার অভিযান ও পরিকল্পনা
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করে খাল পুনরুদ্ধারের নির্দেশনা দিয়েছেন। তার পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য কিছু ধাপ রয়েছে—
- খালের সীমানা চিহ্নিতকরণ: প্রথম ধাপে খালের প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখল চিহ্নিত করা হবে।
- অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান: ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ শুরু করা হয়েছে ।
- প্রাকৃতিক প্রবাহ পুনঃস্থাপন: খালটি আগের মতো লাউতলা ও রামচন্দ্রপুর খালের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ শুরু হবে।
ডিএনসিসি, ঢাকা ওয়াসা ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ করা হবে বলে জানা গেছে। পরিবেশ রক্ষায় ডিএনসিসির অভিযান
হাইক্কার খাল পুনরুদ্ধারের পরিবেশগত গুরুত্ব
খাল ও জলাশয় রক্ষা করা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার অন্যতম কার্যকর উপায়। ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা, বায়ুদূষণ ও উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত এই সংকট সমাধানে হাইক্কার খাল পুনরুদ্ধার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
- জলাবদ্ধতা নিরসন: ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাইক্কার খাল পুনরুদ্ধার হলে বৃষ্টির পানি সহজেই নিষ্কাশিত হবে, যা বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা কমাবে।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: জলাশয় ও খাল শহরের উষ্ণতা কমাতে সাহায্য করে। খাল পুনরুদ্ধার হলে ঢাকার গড় তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমবে।
- জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: দখল ও দূষণের কারণে নগরীর অনেক জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। খাল পুনরুদ্ধার হলে জলজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে।
সামাজিক ও নগর পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ
ঢাকার জনসংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, ফলে নগর পরিকল্পনায় খাল ও জলাশয় রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। উন্নত নগর ব্যবস্থাপনায় খালগুলোকে খোলা রাখা, সবুজায়ন বৃদ্ধি এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রয়োজন।
- নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি: শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, সাধারণ মানুষেরও দায়িত্ব নিতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা যদি খাল দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি সংরক্ষণ সম্ভব হবে।
- স্থায়ী পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ: অনেক সময় খাল পুনরুদ্ধারের পরও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবার দখল ও দূষণের শিকার হয়। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় খালগুলোর পরিচ্ছন্নতা ও সংরক্ষণে বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
শেষ কথা
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি শুধু মোহাম্মদপুরের হাইক্কার খাল নয়, পুরো ঢাকার পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। তবে এ ধরনের প্রকল্প টেকসই করতে হলে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার মতামত কী? এই উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার ভাবনা আমাদের কমেন্টে জানান!