প্রাচীন ঐতিহ্যের পুনর্জন্ম: বাঘের বাড়ি
গহিন সুন্দরবনের শেখেরটেক এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন মন্দিরটির নাম ‘বাঘের বাড়ি’, যা বহু বছর ধরে বাঘের আনাগোনা এবং ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে পরিচিত। তবে, কয়েক শতক পুরনো এই স্থাপনাটি বছরের পর বছর ক্ষয়ে যাচ্ছিল। পুরনো মন্দিরটির সংস্কারের পর এটি যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এটি শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, বরং সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী সুরক্ষার উদ্যোগের অংশও হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাঘের বাড়ির ইতিহাস ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা
সুন্দরবনের ‘বাঘের বাড়ি’ মন্দিরটি প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো, এবং এটি এক সময় শিবসা নদীর পাড়ে রাজা প্রতাপাদিত্যের দুর্গের অধীনে ছিল। মন্দিরটির স্থাপত্যে ব্যবহৃত প্রাচীন ইট ও শামুকের তৈরি চুন আজও মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু বহু বছর ধরে অযত্নে পড়েছিল এই ঐতিহাসিক স্থানটি, যার ফলে দেয়ালে ফাটল ও ঘাস-গাছের শিকড় প্রবেশ করে মন্দিরের স্থায়িত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। ২০২২ সালে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, এবং বন বিভাগ ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
সংস্কারের কাজ: একটি সফল উদ্যোগ
মন্দিরটির সংস্কার কাজের জন্য বিশেষভাবে পুরোনো নকশা অনুসরণ করে নতুন ইটের গাঁথুনি তৈরি করা হয়েছে। কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে এটি মজবুত করা হয়েছে, যেন ভবিষ্যতে এটি আরও স্থায়ী হতে পারে। বন বিভাগের অর্থায়নে সংস্কারকাজটি পরিচালিত হয়, এবং এর মাধ্যমে শুধু ঐতিহাসিক স্থাপনাটিই রক্ষা পায়নি, বরং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষা কার্যক্রমে নতুন উৎসাহ পেয়েছে।
বাঘের বাড়ি: এক ঐতিহাসিক স্থান ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু
মন্দিরটি সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের ১৬ নম্বর কম্পার্টমেন্টে অবস্থিত। এটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে স্থানীয়দের কাছে ‘বাঘের বাড়ি’ নামে পরিচিত, কারণ এখানে প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। সম্প্রতি, মন্দিরটির চারপাশে গড়ে উঠেছে পর্যটন অবকাঠামো। পাকা পথ, ওয়াচ টাওয়ার এবং বিশ্রামঘরের মাধ্যমে এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক পর্যটক আসতে শুরু করেছেন, যা স্থানীয় অর্থনীতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বাঘের বাড়ি: একটি পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ
এটি শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, বরং পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট। সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং পৃথিবীর বৃহত্তম বাঘের অভয়ারণ্য। এই বাঘের বাড়ির সংস্কার ও সুরক্ষা উদ্যোগ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড়িয়েছে যে, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ একসঙ্গে রক্ষা করা সম্ভব।
উপসংহার: বাঘের বাড়ি এবং সুন্দরবন সুরক্ষা
সুন্দরবনের শেখেরটেক এলাকায় মন্দিরটির সংস্কার কেবল ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার একটি উদাহরণ নয়, এটি সুন্দরবন এবং তার বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় একটি বৃহৎ পদক্ষেপের অংশ। এটি প্রমাণ করে যে, স্থানীয় জনগণ, বন বিভাগ ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সম্মিলিত উদ্যোগে একে অপরের সাথে সহযোগিতা করে কীভাবে একটি অঞ্চলের ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করা সম্ভব।