বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ দিন দিন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। নদী দখল ও দূষণ, পাহাড় কাটার অবৈধ কার্যক্রম, বন উজাড়, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) উদ্দেশ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। নদী-পাহাড়-বন রক্ষায় ডিসিদের নির্দেশনা
পরিবেশ রক্ষায় ডিসিদের ভূমিকা
জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রমের মূল চালিকা শক্তি। পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বাস্তবায়ন ক্ষমতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিবেশ উপদেষ্টা ডিসিদের প্রতি যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন, সেগুলো কার্যকর হলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার পথ সুগম হতে পারে।
কঠোর পরিবেশ রক্ষার নির্দেশনা
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ডিসি সম্মেলনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে—
- পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে: পাহাড় কেটে জমি দখল ও স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- বন সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে: সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা চিহ্নিত করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। বিশেষ করে মধুপুর শালবন সংরক্ষণ এবং বনের রেকর্ড সংশোধনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
- নদী ও জলাশয়ের দখল ও দূষণ রোধ: প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং জলাশয়ের রেকর্ড সংশোধন করতে হবে।
বিশেষ প্রকল্প বাতিলের নির্দেশনা
পরিবেশ উপদেষ্টা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ৫১ একরের আবাসন প্রকল্পটি বাতিল করার নির্দেশনা দেন, কারণ এটি সংরক্ষিত বনভূমির মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি রাজা কাশিমের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড অপসারণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। নদী-পাহাড়-বন রক্ষায় ডিসিদের নির্দেশনা
পর্যটন ও শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণ
- পর্যটন নিয়ন্ত্রণ: সমুদ্র সৈকত, হাওড়, দ্বীপ ও বনাঞ্চলে পর্যটন সংক্রান্ত একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
- শিল্প কারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ: পরিবেশ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
- বালু ও পাথর উত্তোলনের নিয়মনীতি: পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া বালু ও পাথর উত্তোলন করা যাবে না বলে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইটভাটা ও প্লাস্টিক দূষণ রোধ
- ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
- প্লাস্টিক দূষণ রোধ: একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পুরাতন কাপড় দিয়ে ব্যাগ তৈরির উদ্যোগ নিতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরিবেশ সচেতনতা ও নাগরিক উদ্যোগ
- পরিবেশ অপরাধীদের তালিকা প্রণয়ন: পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
- পরিবেশ স্বেচ্ছাসেবক গঠন: পরিবেশ রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী দল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
- পরিবেশ ও বৃক্ষরোপণ পদক: ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর পরিবেশ সংরক্ষণের অবদানের স্বীকৃতি দিতে পদক প্রদানের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শেষ কথা
পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশনাগুলো কার্যকর হলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের বর্তমান প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে। তবে, এগুলো বাস্তবায়নে প্রশাসন, জনগণ এবং পরিবেশবাদীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
আপনি কি মনে করেন, পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের আরও কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত? আপনার মতামত কমেন্টে জানান!