বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে একমাত্র গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে যে চুক্তি রয়েছে, তা ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি ৩০ বছরের মেয়াদে ছিল, যা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে। চুক্তি নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আগামী মার্চে বাংলাদেশের একটি কারিগরি দল ভারত সফরে যাবে। চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এবং বাংলাদেশের স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করা যাবে—এই বিষয়গুলো এখন আলোচনার কেন্দ্রে। গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়ন
গঙ্গা পানি চুক্তি: প্রেক্ষাপট
গঙ্গা পানি চুক্তি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে গঙ্গার পানির সুষ্ঠু বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়েছিল। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল গঙ্গা নদী থেকে বাংলাদেশের পানির চাহিদা পূরণ করা এবং ভারতের বিভিন্ন প্রয়োজনে পানির ব্যবহার নির্ধারণ করা। তবে ৩০ বছর মেয়াদী এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালে, যা নতুন চুক্তির প্রয়োজনীয়তা এবং গঙ্গা পানি ব্যবস্থাপনায় ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ করবে।
নতুন চুক্তির জন্য প্রস্তুতি
গঙ্গা পানি চুক্তির নবায়ন প্রক্রিয়ার জন্য ২০২৬ সালের মধ্যে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এর জন্য বিশেষভাবে কাজ করবে বাংলাদেশ এবং ভারতের কারিগরি দল। এই দলটি পানির বণ্টন, ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণ সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ের কাজ করবে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দলের কাজ শুধু পানির ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে, পানিবণ্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া তাদের এখতিয়ারের মধ্যে নেই। নদী বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত এই বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘কারিগরি কমিটির ম্যান্ডেট স্পষ্ট—তারা পানিবণ্টন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, কেবল তথ্য বিনিময় করতে পারে।’
বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা: কী হবে নতুন চুক্তিতে?
গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়ন নিয়ে বাংলাদেশের সরকার আগেই জানিয়েছিল যে, তারা চুক্তির আগের শর্তগুলোই বহাল রাখার পরিকল্পনা করছে। তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ আলোচনা এই বিষয়ে কিছুটা পরিবর্তন আনার পক্ষে। পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, ‘২০২৬ সালের মধ্যে চুক্তি নবায়ন করতেই হবে। আমরা বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তবে নতুন চুক্তি আমাদের মেয়াদে স্বাক্ষর হবে না, সেটি প্রায় নিশ্চিত।’ গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়ন
সেইসাথে, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও জানিয়েছেন, ‘চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মতামত আসছে। এসব মতামত পর্যালোচনা করেই কারিগরি কমিটি আলোচনায় বসবে এবং মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফর করবে।’ এর মাধ্যমে, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে পানির বণ্টন এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আরও পরিষ্কার এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশগত প্রভাব
গঙ্গা নদী কেবল পানি সরবরাহের জন্য নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বও রাখে। তাই এই চুক্তির নবায়ন শুধু পানি সরবরাহের জন্য নয়, পরিবেশ এবং জনগণের জীবনযাত্রার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গঙ্গার পানি একদিকে যেমন কৃষি, শিল্প এবং পানীয় জল সরবরাহে প্রয়োজনীয়, অন্যদিকে নদীর পানি পরিবেশের সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেরও এই চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন করা উচিত, যাতে দুই দেশের জন্যই একটি সুবিধাজনক এবং পরিবেশবান্ধব চুক্তি তৈরি হয়। ড. আইনুন নিশাতের মতে, অভিন্ন নদীগুলোর সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ-ভারতকে যৌথভাবে কাজ করা জরুরি।
চুক্তির ভবিষ্যত: বাংলাদেশের প্রস্তুতি
বাংলাদেশের পানি সংরক্ষণ নীতি এবং গঙ্গার পানি ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করা জরুরি। ভবিষ্যতে, বাংলাদেশ যদি এই চুক্তির শর্তাবলী পুনঃমূল্যায়ন করতে চায়, তবে তারা আরও সজাগ এবং প্রস্তুত হয়ে চুক্তির নবায়নে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এটি শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষা করবে না, বরং বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবে।
শেষ কথা
গঙ্গা পানি চুক্তির নবায়ন বাংলাদেশের পরিবেশ এবং নদী ব্যবস্থাপনার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগামী মাসে ভারত সফরের মাধ্যমে নতুন চুক্তির বিষয়ে আরও স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আসবে। তবে, বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা এবং দুই দেশের মধ্যে সুষ্ঠু পানিবণ্টন নিশ্চিত করার জন্য, কারিগরি দল এবং সরকারের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
Call to Action (CTA): গঙ্গা পানি চুক্তির নবায়ন এবং বাংলাদেশ-ভারতের পানির ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরও জানতে পোস্টটি শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে আপনার মতামত জানাবেন!