জলাশয়ের সংকট ও পরিবেশ বিপর্যয়
সারাদেশের জলাশয়গুলো ক্রমশ দখল ও দূষণের কবলে পড়ে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, মৎস্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং স্থানীয় মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। উপদেষ্টার সতর্কবার্তা
আজ বুধবার সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খামারিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘সারাদেশেই হাওর-বাওড়সহ অন্যান্য জলাশয়গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দখল ও দূষণের ফলে জলজ প্রাণী, মাছ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।’
জলাশয় রক্ষায় উদ্যোগ
‘জাল যার, জলা তার’ স্লোগানের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘জলাশয়ের ইজারা যেন প্রকৃত মৎস্যজীবীরা ছাড়া অন্য কেউ না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সম্প্রতি ভূমি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জলাশয় সংরক্ষণের পাশাপাশি মাছচাষের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয়।’
দূষণের কারণে কমছে উৎপাদন
জলাশয়ে অপরিকল্পিত শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য ও রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে জল দূষিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘তাৎক্ষণিক মুনাফার আশায় মাছ ও অন্যান্য গবাদিপশুকে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে জলাশয় দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি সকল মৎস্যজীবী ও খামারিদের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষের যেমন নিরাপদ খাদ্য প্রয়োজন, তেমনই পশুখাদ্যও নিরাপদ হওয়া জরুরি।’
সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা
সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন জলাশয় সংরক্ষণে কতটুকু ভূমিকা রাখছে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘জলাশয় সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে এটি আরও জোরদার করতে হবে।’ উপদেষ্টার সতর্কবার্তা
দখল ও দূষণ রোধে করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলাশয় সংরক্ষণে সরকার, প্রশাসন, পরিবেশবিদ এবং সাধারণ জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলাশয় রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।