27.6 C
Bangladesh
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫
spot_img

সুনামগঞ্জে সোলার প্রকল্পের দুর্নীতির কারণে অন্ধকারে ৫০০ পরিবার

প্রবৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থ কি সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে?

বিগত কিছু বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়েছে। কিন্তু, সুনামগঞ্জের শাল্লায় নেওয়া এক সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্পের বাস্তবতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থে প্রকল্পের কার্যক্রম তো কোনোভাবেই সফল হয়নি, বরং এর ফলে প্রায় ৫০০ পরিবার বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। আসুন, বিশ্লেষণ করি প্রকল্পটির জটিলতা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত দুর্নীতির ঘটনা। অন্ধকারে ৫০০ পরিবার

সোলার প্রকল্পের ব্যর্থতা: আশানুরূপ ফলাফল না আসা কেন?

২০১৩ সালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ৫টি গ্রামের ৪ শতাধিক পরিবারকে বিদ্যুতের আওতায় আনার জন্য ৩১ কোটি ৪৩ লাখ টাকায় একটি সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্প শুরু হয়। ২০১8 সালে উৎপাদন শুরু হলেও, প্রথম থেকেই প্রকল্পটি প্রত্যাশিত ফলাফল দিতে পারেনি। প্রকল্পটি চালু হওয়ার প্রথম বছরে গ্রাহকরা কিছু সময় বিদ্যুৎ পেলেও, পরবর্তী বছরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বেশিরভাগ সময়ে সমস্যা দেখা দেয়।

গ্রাহকদের অভিযোগ, বিশেষত ২০২২ সালের বন্যার পর থেকে সোলার প্রকল্পটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পটির প্রায় ৯০ শতাংশ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ সানটেক কনসোর্টিয়াম, অথচ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দুরবস্থা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকেও এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি, যার ফলে এই দুর্নীতি ও অযোগ্যতার জন্য প্রকল্পের কার্যক্রম পুরোপুরি থেমে গেছে।

দুর্নীতির অভিযোগ: কীভাবে পুরো প্রকল্পে টাকা গেলো?

এই প্রকল্পের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়েছে, আর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১১ কোটি ১২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা দিয়েছিল। অথচ প্রকল্পটি প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে কার্যক্ষমতা দেখাতে পারেনি। এর মধ্যে রহিম আফরোজ সানটেক কনসোর্টিয়াম তাদের ৯০ শতাংশ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, যদিও প্রকল্পের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, সঞ্চালন লাইন এবং নির্মাণে যথাযথ মান রক্ষা হয়নি। অন্ধকারে ৫০০ পরিবার

এটি স্পষ্ট যে, প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়নি, যা সরকারি অর্থের অপচয় এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে প্রতারণার লক্ষণ। স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করছেন যে, তাদের নির্ধারিত বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা ২০২২ সালের পর থেকে অন্ধকারে রয়েছেন।

অভিযোগের সত্যতা: স্থানীয় মানুষদের ক্ষোভ ও ক্ষতিপূরণ দাবি

শাল্লা উপজেলার স্থানীয় জনগণ এবং জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন যে, প্রকল্পের যন্ত্রপাতিতে বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। তাদের দাবি, সোলার প্যানেল এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির স্থাপন সঠিকভাবে হয়নি, এবং বিশেষত বন্যার পানি প্রবাহের কারণে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ, হাওড় অঞ্চলে বন্যা একটি স্বাভাবিক ঘটনা, যেখানে এসব যন্ত্রপাতি স্থাপন করার সময় উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন ছিল।

তারা জানান, প্রথম বছরে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়ার পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়, এবং ২০২২ সালে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এই দুর্নীতির তদন্ত করা হলে প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

শাল্লার প্রকল্পের পার্থক্য: কেন অন্যান্য সোলার প্রকল্প সফল?

এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন শাল্লার সোলার প্রকল্প এত ব্যর্থ হল, অথচ অন্যান্য প্রকল্পগুলো সফলভাবে কাজ করছে? নোয়াখালীর মনপুরায় এবং অন্যান্য এলাকায় একই ধরনের সোলার প্রকল্প চালু হয়েছে, যেখানে খরচ অনেক কম এবং উৎপাদনও অনেক বেশি। সেখানে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬-১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, কিন্তু শাল্লার ৩১ কোটি টাকার প্রকল্পে প্রায় ৩ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।

এটি স্পষ্ট যে, শাল্লার প্রকল্পে যন্ত্রপাতি এবং নির্মাণের মানে বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। এর ফলে স্থানীয় জনগণের কাছে সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প একটি প্রত্যাশিত সাফল্য না হয়ে, একটি বড় ধরনের প্রতারণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিশেষ: সরকারের প্রতি আহ্বান এবং সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজন

এ ঘটনা থেকে পরিষ্কার যে, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে চলা প্রকল্পগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। দুর্নীতি, নিম্নমানের যন্ত্রপাতি, এবং অযোগ্য পরিচালনার কারণে প্রকল্পগুলো জনগণের জন্য কার্যকর হয়নি। শাল্লার সোলার প্রকল্পে প্রায় ৩১ কোটি টাকার অপচয় হয়েছে, যা এখন তদন্তের প্রয়োজন।

এ পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং এমন দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সঠিক পরিচালনা এবং তদারকি ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে নেওয়া প্রকল্পগুলো শুধু অর্থের অপচয় হবে না, বরং সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলবে।

এ বিষয়ে আপনার মতামত দিন!

আপনি কি মনে করেন, শাল্লার এই সোলার প্রকল্পের দুর্নীতি তদন্ত হওয়া উচিত? বা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এ ধরনের প্রকল্পগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা কিভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব? আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের কমেন্ট সেকশনে জানাতে ভুলবেন না!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ