সুন্দরবনে অবৈধ হরিণ শিকারের ঘটনা থামছে না। বনরক্ষীদের উপস্থিতি টের পেয়ে শিকারিরা নৌকা থেকে ৯০ কেজি হরিণের মাংস ফেলে দিয়ে পালিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) খুলনার কয়রা উপজেলার ছেড়ারখাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হরিণের মাংস উদ্ধার
শিকারিদের ফাঁদ ভেস্তে দিল বনরক্ষীদের অভিযান
বন বিভাগ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বনরক্ষীরা আগে থেকেই ওত পেতে ছিল। শিকারিরা বনের খাল ধরে নৌকা নিয়ে লোকালয়ের দিকে এগোচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে বনরক্ষীরা অভিযান চালায়। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শিকারিরা দ্রুত নৌকা থেকে মাংস ফেলে খালের মধ্যে লাফিয়ে পড়ে গভীর বনে পালিয়ে যায়।
বন বিভাগের সদস্যরা নৌকা থেকে উদ্ধার হওয়া মাংস জব্দ করে আদালতে পাঠায়। পরে আদালতের নির্দেশে উদ্ধারকৃত মাংস কেরোসিন মেখে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। হরিণের মাংস উদ্ধার
হরিণ শিকার কি কমছে?
সুন্দরবনের খাঁশিটানা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাই, কিন্তু শিকারিরা পালিয়ে যায়। আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মো. সাদিকুজ্জামান বলেন, “এই এলাকায় হরিণ শিকারিরা দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। তবে আগের তুলনায় শিকার কমেছে। আজকের ঘটনায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা হয়েছে, শিকারিরা যাতে ধরা পড়ে সে জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।” হরিণের মাংস উদ্ধার
শিকার কেন বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনের চিত্রল হরিণ এখন বড় সংকটের মুখে। মূল কারণগুলো হলো—
- অবৈধ বাজার: সুন্দরবনের হরিণের মাংসের চাহিদা বেশি, ফলে অনেকেই লোভে পড়ে শিকারে যুক্ত হচ্ছে।
- নিয়ন্ত্রণহীন প্রবেশ: বনরক্ষীদের সংখ্যা কম থাকায় শিকারিরা সহজেই সুযোগ নিচ্ছে।
- জলবায়ু পরিবর্তন: পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে বনের বাস্তুসংস্থান নষ্ট হচ্ছে, যা বন্য প্রাণীদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করছে।
- সচেতনতার অভাব: স্থানীয়রা অনেক সময় শিকারিদের সহায়তা করে বা নীরব থাকে, যার ফলে এই চক্র চালু থাকে।
শিকার বন্ধে করণীয়
হরিণ শিকার বন্ধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন—
- আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা
- বনরক্ষীদের সংখ্যা ও নজরদারি বাড়ানো
- স্থানীয়দের সচেতন করা ও বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করা
- বন সংরক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা
শেষ কথা
সুন্দরবন বাংলাদেশের জন্য শুধু একটি বন নয়, এটি উপকূলের প্রাকৃতিক রক্ষা দেয়াল। যদি অবৈধ শিকার বন্ধ করা না যায়, তাহলে শুধু হরিণ নয়, পুরো বনই একসময় সংকটে পড়বে।
সুন্দরবন রক্ষা করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। শিকারিদের ধরতে আইন আরও কঠোর করতে হবে, আর স্থানীয় জনগণকে এই চক্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আপনার মতামত কী? হরিণ শিকার বন্ধে আরও কী করা দরকার? মন্তব্য করুন এবং সচেতনতা বাড়াতে এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন।