বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে খোলপেটুয়া নদীর পাশে ১০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঘটনা, যা সম্প্রতি স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এটি কেবল স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক নয়, বরং বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বেড়িবাঁধের দুর্বলতা বৃদ্ধি এবং তার পুনর্নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করেছে। বেড়িবাঁধ ভাঙন ঝুঁকি
ভাঙনের নতুন তাণ্ডব
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে খোলপেটুয়া নদীর ১০০ ফুট বেড়িবাঁধের সামনের অংশ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভেঙে যাওয়ায় নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে, এলাকার কৃষক এবং স্কুলের অভিভাবকদের মনে বড় ধরনের শঙ্কা সৃষ্টি করেছে যে, ভবিষ্যতে এই ধরনের ভাঙন আরও বড় আকারে ঘটতে পারে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ থেকে নদীর তীব্র স্রোতের কারণে বেড়িবাঁধের বড় একটি অংশ নদীতে চলে গেছে। এই ঘটনা এলাকার প্রায় ৬০০ মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলেছে।
পুনর্নির্মাণ কাজের চ্যালেঞ্জ
স্থানীয় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাম্প্রতিক সময়ে বিছট বেড়িবাঁধে সংস্কারের কাজ শুরু করেছিল, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী স্রোত এবং ভূমিকম্পজনিত গতি বেড়ে যাওয়ায় তা যথেষ্ট কার্যকর প্রমাণ হয়নি। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অপরদিকে অনিরাপদ নির্মাণ উপকরণ—এই সমস্ত কারণে স্থানীয় বেড়িবাঁধের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। সংস্কার কাজ চললেও, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, এই বাঁধটির স্থায়িত্ব নিয়ে নতুন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভাঙন ঝুঁকি
পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম বড় সমস্যা, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো নদীভিত্তিক দেশগুলোর জন্য। প্রবল স্রোত, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধের সংস্কারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে খোলপেটুয়া নদী এবং মরিচাপ নদীর মত নদীগুলির তীব্র স্রোতের কারণে বাঁধগুলি বারবার ভেঙে যাওয়ার ঘটনা প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, অতি বৃষ্টিপাতের ফলে নদীটির পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে যাচ্ছে, যা বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের ভাঙন বাড়াচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাদের ধারণা, আরও কয়েকটি জোয়ার আসলে এই এলাকাটি প্লাবিত হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি আরও প্রবল হয়ে উঠবে যদি জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত থাকে।
স্থানীয় জনগণের দাবি
স্থানীয়দের দাবী, ‘তাদের শুধু ত্রাণের প্রয়োজন নয়, বরং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন’। তারা দাবি করছেন যে, বেড়িবাঁধের সংস্কারের সাথে সাথে নদীর তীর রক্ষায় আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ভাঙন রোধ করা যায়। চেলাছড়া গ্রামের বাসিন্দারা বারবার এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আসছেন এবং এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চান।
সবার উদ্যোগের প্রয়োজন
প্রথমে স্থানীয় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙন সংক্রান্ত খবর পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হলেও, পুরোপুরি সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই উদ্যোগ কেবল সাময়িক সফলতা পেতে পারে। পরিবেশবাদীরা এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, শুধু স্থানীয় স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া যথেষ্ট নয়—এটি একটি বৃহত্তর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংকট, যেখানে জোর দেওয়া দরকার টেকসই এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকে।
শেষ কথা
বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও, তাতে যথেষ্ট স্থায়িত্ব না থাকার কারণে স্থানীয় মানুষজন এখন আতঙ্কিত। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত কারণে বেড়িবাঁধের সংকট বাড়ছে এবং এর ফলে স্থানীয় জনগণের জীবিকা এবং নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। তবে সরকারের সহযোগিতায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।
এখন সময় এসেছে, শক্তিশালী নদী তীর রক্ষা ব্যবস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি প্রকৃত মনোযোগ দেওয়ার। বিষয়টি নিয়ে আপনার কী মতামত? মন্তব্যে জানাবেন!