27 C
Bangladesh
বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
spot_img

জীবিকার লড়াই বনাম অবৈধ দখল: নদীর জন্য কে লড়বে?

নদী ও জলসম্পদের সংকট

নদী হলো আমাদের পরিবেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু একটি জলধারা নয়, বরং বাস্তুসংস্থানের মূল ভিত্তি, জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল এবং বহু মানুষের জীবিকার উৎস। কিন্তু সম্প্রতি, বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে নদী দখল এবং ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, যা শুধু আইনি নয়, বরং পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকেও গভীর উদ্বেগের বিষয়। নদীর জন্য কে লড়বে

জেলেদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন

নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের জেলেরা কয়েক দশক ধরে মেঘনা নদীর নির্দিষ্ট কিছু অংশে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। এসব অংশ, স্থানীয়ভাবে ‘হার’ নামে পরিচিত, এক ধরনের অলিখিত সমঝোতার ভিত্তিতে জেলেদের মধ্যে ভাগ করা ছিল। কিন্তু গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর এই চিত্র বদলে যেতে শুরু করে। স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তি নদীর এসব অংশ দখল করে অন্যদের কাছে বিক্রি বা ভাড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাছ ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন অনেক জেলে। কেউ কেউ নৌকা নিয়ে নদীতে নামলেই বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি নির্দিষ্ট অংকের টাকা না দিলে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। ফলে শত শত জেলের জীবন-জীবিকা চরম সংকটে পড়েছে।

পরিবেশগত ক্ষতি ও জলবায়ুর প্রভাব

নদী দখল কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং এটি পরিবেশের ওপরও সরাসরি বিরূপ প্রভাব ফেলে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে বাস্তুসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি শুধু মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করে না, বরং সামগ্রিকভাবে জলজ সম্পদের ভারসাম্য নষ্ট করে। নদীর জন্য কে লড়বে

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রভাব হলো নদীর প্রবাহ পরিবর্তন, নদী ভাঙন এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধি। এর মধ্যে যদি অবৈধ দখল ও বাণিজ্যিক স্বার্থ যুক্ত হয়, তবে পরিবেশগত বিপর্যয় আরও তীব্র হবে।

প্রশাসনিক পদক্ষেপ কতটুকু কার্যকর?

এই সংকট নিরসনে প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়ভাবে অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখা যায়নি। বরং ভুক্তভোগী জেলেরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।

কী করা প্রয়োজন?

১. কঠোর আইনি ব্যবস্থা: নদী দখলের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

২. জেলেদের সুরক্ষা: নদীতে মাছ ধরার অধিকার যেন কেউ জোর করে কেড়ে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. পরিবেশগত নজরদারি: নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও অবৈধ দখল রোধে পরিবেশবিদদের সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

৪. সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নদী দখলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে হবে।

শেষ কথা

নদী আমাদের সম্পদ, আমাদের ভবিষ্যৎ। এটি রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, বরং সমাজের প্রতিটি মানুষের। নদী দখল ও পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আপনি যদি এ বিষয়ে মতামত রাখতে চান, তবে কমেন্টে জানান। পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে—এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

Call to Action (CTA): নদী রক্ষায় আপনার মতামত জানান কমেন্টে! পরিবেশ সচেতনতার জন্য পোস্টটি শেয়ার করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ