25.1 C
Bangladesh
শুক্রবার, জুলাই ১১, ২০২৫
spot_img

কীভাবে বন্যপ্রাণীর আবাসন সংকট পরিবেশকে বিপদে ফেলছে?

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে এখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে, কারণ ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের সাথে বন্যপ্রাণীর সংঘর্ষের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, পাহাড়ি অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর আবাসন সংকট দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। এতে শুধু বন্যপ্রাণী নয়, মানুষের জীবনও বিপদাপন্ন হয়ে পড়ছে। বন্যপ্রাণীর আবাসন সংকট

বন্যহাতির আক্রমণ: এক উদাহরণ

সাম্প্রতিক একটি ঘটনায়, রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের কেথাকপাড়া এলাকায় ২৭ ফেব্রুয়ারি খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতির এক দল লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে উচসিং মারমা নামক এক ব্যক্তি হাতির আক্রমণে প্রাণ হারান। এমন ঘটনা দেশজুড়ে বেড়ে চলেছে, যেখানে বন্যহাতি, যেমন বান্দরবান এবং রাঙামাটি অঞ্চলে মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা চালাচ্ছে, তেমনই মানুষও হাতি শিকার করছে। এক দিকে বন্যহাতির খাদ্যাভাবে লোকালয়ে আগমন, অন্যদিকে মানবিক কারণে শিকার—এই সংঘাতটি এক কঠিন অবস্থার সৃষ্টি করছে। বন্যপ্রাণীর আবাসন সংকট

আইইউসিএনের সর্বশেষ জরিপে, বাংলাদেশে মাত্র ২৬৮টি এশিয়ান বন্যহাতি বেঁচে রয়েছে, যাদের অনেকেই সীমান্তবর্তী পাঁচটি বনাঞ্চলে বিচরণ করে। তবে, গত এক বছরে ২২টি হাতি মারা যাওয়ার ঘটনা দেখা গেছে, যার মধ্যে গুলি, বিষ প্রয়োগ এবং বৈদ্যুতিক শক ব্যবহারের মতো নৃশংস ঘটনা রয়েছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, বন্যপ্রাণী এবং মানুষের মধ্যে সংঘর্ষের মাত্রা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।

সুন্দরবন: লবণাক্ততার প্রভাবে বিপন্ন বন্যপ্রাণী

সুন্দরবন, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, বর্তমানে লবণাক্ততার প্রভাবে বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ২০০১ সাল থেকে সুন্দরবনে ৫৫টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা গেছে, যার মধ্যে অধিকাংশই চোরা শিকার বা বিষ প্রয়োগের শিকার। এমনকি এ অঞ্চলের অন্যান্য বন্যপ্রাণীও বর্তমানে বিপদের মধ্যে রয়েছে। সুন্দরবনের সঙ্কট শুধু হাতির জন্য নয়, এখানে বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণী যেমন বাঘ, মেছোবাঘ, উল্লুক, ঘড়িয়াল, বনরুই, এবং এমনকি রাজ গোখরা সাপের অস্তিত্বও বিপন্ন হতে চলেছে।

এছাড়া, সুন্দরবন এবং আশপাশের জলাভূমিতে প্রচুর সংখ্যা বেড়েছে বন্যপ্রাণী শিকার এবং পাচারের। এসব অভ্যন্তরীণ সমস্যা দিন দিন বৃহত্তর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, যা জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলছে।

পাহাড়ি অঞ্চলে সরীসৃপের বিপদ: জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বন উজাড়ের প্রভাব

পাহাড়ি অঞ্চলে, বিশেষত চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়, মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘর্ষ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সরীসৃপ প্রজাতির যেমন অজগর সাপ, তারা খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে এবং আটকা পড়ছে। গত এক বছরে, মিরসরাই উপজেলায় ১৫টি অজগর সাপ লোকালয়ে ঢুকে আটকা পড়েছে। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয়, বনাঞ্চল এবং জলাভূমির সংকট বন্যপ্রাণীকে লোকালয়ে চলে আসার জন্য বাধ্য করছে, যা মানুষের এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।

বন্যপ্রাণী হত্যার আশঙ্কা: আইনগত দুর্বলতা

যতটুকু জানা যাচ্ছে, বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনা বাড়ছে এবং এর মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আইন এবং নীতিমালার সঠিক প্রয়োগের অভাব। আইইউসিএন কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপের মতে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে ৩০-৪০% বন্যপ্রাণী আগামী কিছু বছরেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। সরকার, যদিও আইন প্রণয়ন করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না।

এ বিষয়ে স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ড লাইফ (সিউ) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানাচ্ছে যে, ২০২৪ সালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় মোট ৩২৬টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার হয়েছে, যাদের মধ্যে ১০৪টি মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। এটি একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি, যেখানে মানবিক অশান্তি এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণেই বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্যসচিব শরীফ জামিল জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ এবং বন উজাড়ের মতো বিষয়গুলি বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্বকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। তিনি জানান, “আইন ও নীতিমালার সঠিক প্রয়োগ ছাড়া এই অবস্থা শুধুমাত্র খারাপই হবে, ভবিষ্যতে বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি ঠেকানো সম্ভব হবে না।”

এদিকে, ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৩ মার্চকে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যার মূল লক্ষ্য হলো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই দিবসে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলোও নানা কর্মসূচি আয়োজন করছে।

শেষ কথা: আমাদের দায়িত্ব কী?

বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ আমাদের সবার দায়িত্ব। যদি আমরা একে অপরের সহযোগিতায় পরিবেশ রক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করি, তবে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকবে। বন্যপ্রাণী হত্যার শাস্তি আরো কঠোর হওয়া উচিত, এবং আইনের প্রয়োগকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আজকে যদি আমরা এই সংকটের সমাধান না করি, তবে আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য হারানোর শঙ্কা থেকে যাবে।

Call to Action:

আপনি কি জানেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে? আপনার কী মনে হয়, কীভাবে আমরা পরিবেশ রক্ষা করতে পারি? নিচে আপনার মতামত দিন এবং এই পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে আরও মানুষ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতন হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ