সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষক এবং বিশেষজ্ঞরা। এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোর নির্মাণে ধীরগতি এবং অনিয়মের কারণে লাখো কৃষকের কৃষিজমি বিপদমুক্ত রাখা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ও পাউবোর কর্মকর্তারা আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন, যার কারণে বাঁধগুলোর নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। সুনামগঞ্জের কৃষকরা চরম বিপদে
প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি: বাঁধ নির্মাণের অবহেলা
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঁধের কাজগুলোর গতি এতটাই কম যে, আগামী বৃষ্টিপাত বা অকাল বন্যা আসলে হাওর এলাকার কৃষকদের জমি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এই প্রকল্পের আওতায় মোট ৬৮৭টি বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে, যার মধ্যে অনেক বাঁধের কাজই শেষ হয়নি। একাধিক স্থান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পিআইসি কর্মকর্তারা আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে কাজের গতি কমিয়েছেন। এমনকি, বাঁধের বিভিন্ন অংশে মাটি ফেলাই হয়নি, দুরমুশ বা ঘাস লাগানোর কাজও সম্পূর্ণ হয়নি।
প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করছেন, পিআইসি ও পাউবোর কিছু কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন, যা প্রকল্পের গতি ধীর করেছে। কর্মকর্তাদের ধারণা, যদি এই বছর উজানের পানি না আসে, তবে বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ না করলেও চলবে। এতে প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য, অর্থাৎ কৃষকদের বন্যার কবল থেকে রক্ষা করা, সেটা তুচ্ছ হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জের কৃষকরা চরম বিপদে
কৃষকদের আশঙ্কা: বড় বিপদ অপেক্ষা করছে
কৃষকরা অত্যন্ত শঙ্কিত যে, বাঁধের কাজ অসম্পূর্ণ থাকলে তাদের ফসলের ক্ষতি হবে। আবদুস ছত্তার, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি, বলছেন যে, যদি বাঁধ ভেঙে বা ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ না করা হয়, তাহলে বৃহৎ এলাকায় ফসল ডুববে এবং লাখো মানুষের জীবন বিপদগ্রস্ত হবে। এমনকি, কিছু বাঁধের নদী তীরবর্তী অংশে ভয়ংকর ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পিআইসির অবহেলা: কৃষকের চোখে অনিয়ম
কৃষক শামছুল হক ও আবদুস ছত্তারসহ আরও অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বাঁধের বিভিন্ন অংশে ৪০% কাজ শেষ হয়েছে, যা সরাসরি তাদের কৃষিজমি এবং ভবিষ্যতের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মাটি ফেলার কাজ এবং বাঁধের নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলি সম্পূর্ণ করতে না পারায় ঝুঁকি আরো বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
এদিকে, সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার এবং শান্তিগঞ্জের পানি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোমিন মিয়া জানান, কাজের গতি ধীর হলেও তারা পুরো প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার জন্য চেষ্টা করছেন। তবে, তাদের দাবি এবং বাস্তবতা ভিন্ন, এবং প্রকল্পের সঠিক অগ্রগতি নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
এর প্রভাব কী হতে পারে?
এ প্রকল্পের অসম্পূর্ণ কাজ শুধুমাত্র কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ও জলবায়ুতে এর প্রভাব ফেলবে। একদিকে, পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটলে স্থানীয় প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর তার খারাপ প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে, যদি বাঁধে জলাধার সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয়, তবে এলাকার জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
শেষ কথা
এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে প্রয়োজন দ্রুততম সময়ে কাজ সম্পন্ন করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করা। কৃষকদের জীবন রক্ষা এবং পরিবেশের ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য প্রশাসন এবং পিআইসি কর্মকর্তাদের আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এই পরিস্থিতি থেকে কি শিক্ষা নিতে পারি? আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে, যেন প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে এবং সময়মতো বাস্তবায়িত হয়। কৃষকদের ভবিষ্যত এবং পরিবেশের ক্ষতি রোধ করতে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
আপনি কি মনে করেন? এই প্রকল্পের অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? মন্তব্যে জানিয়ে দিন।