দীর্ঘ দুই দশক পর সৌদি আরবের হামাদ অঞ্চলে আবারও দেখা মিলেছে সালসোলা গুল্মের। একসময় মরু অঞ্চলের এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ ব্যাপকভাবে পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত আহরণ এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে এটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। তবে সম্প্রতি আবারও এই গুল্মের দেখা মিলেছে, যা পরিবেশবিদদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। মরুভূমিতে ফিরে এলো সালসোলা গুল্ম
এই গুল্ম শুধুমাত্র প্রাণীদের খাদ্য হিসেবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি মরুভূমির মাটির ক্ষয়রোধেও সাহায্য করে। তাই সালসোলা গুল্মের ফিরে আসা শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জলবায়ুর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব, কীভাবে এই গুল্ম পরিবেশ ও জলবায়ুর সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এটি ফিরে আসার অর্থ কী।
সালসোলা গুল্ম: বৈশিষ্ট্য ও পরিচিতি
সালসোলা এক ধরনের গুল্ম, যার বৈজ্ঞানিক নাম Salsola tetrandra। ‘সালসোলা’ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ salsus থেকে, যার অর্থ ‘লবণাক্ত’ বা ‘নোনতা’। এর অর্থ হলো, এই গুল্ম লবণাক্ত ও শুষ্ক পরিবেশেও টিকে থাকতে সক্ষম।
‘টেট্রান্ডা’ নামের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ tetra (চার) এবং andros (পরাগধানী) থেকে, যার মানে হলো, এর ফুলে চারটি পরাগধানী থাকে। সাধারণত, সালসোলা গুল্ম মরু ও শুষ্ক এলাকাগুলোতে জন্মে এবং খুব সহজেই প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এটি প্রাণী ও গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, পাশাপাশি ভূমিক্ষয় রোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
হামাদ অঞ্চলে সালসোলা গুল্মের হারিয়ে যাওয়া ও ফিরে আসা
সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের হামাদ অঞ্চল একসময় সালসোলা গুল্মের জন্য পরিচিত ছিল। প্রচুর গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের কারণে অতিরিক্ত আহরণ এই গুল্মের ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চারণভূমির অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অনিয়ন্ত্রিত তৃণ ও গুল্ম আহরণ এই উদ্ভিদকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়। মরুভূমিতে ফিরে এলো সালসোলা গুল্ম
দীর্ঘ ২০ বছর পর এই গুল্মের আবারও ফিরে আসার ঘটনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এটি নির্দেশ করে যে, পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন বা সরকারি সংরক্ষণ নীতির কারণে সালসোলা আবার নতুন করে বেড়ে উঠতে শুরু করেছে।
পরিবেশবিদরা মনে করছেন, পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় এই গুল্মের দেখা মিলছে মূলত সেখানে মানুষের কার্যকলাপ কম থাকায় এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় এটি বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। পাশাপাশি সৌদি সরকার বর্তমানে পশুচারণভূমি পুনরুদ্ধার এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে, যা এই গুল্মের পুনরুত্থানে ভূমিকা রাখতে পারে।
সালসোলা গুল্মের পরিবেশগত গুরুত্ব
এই গুল্ম শুধু মরুভূমির বাস্তুতন্ত্রের একটি অংশ নয়, বরং এটি বিভিন্নভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে:
১. ভূমিক্ষয় রোধ
সালসোলা গুল্মের শিকড় মাটিকে শক্তভাবে ধরে রাখে, যা মরু অঞ্চলে ভূমিক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত, ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির ফলে যে ভূমিক্ষয় হয়, তা প্রতিরোধে এই গুল্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২. কার্বন ধারণ ক্ষমতা
অন্যান্য মরু গুল্মের মতো সালসোলাও বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শোষণ করতে পারে। যদিও এর পরিমাণ তুলনামূলক কম, তবে এটি মরু অঞ্চলের কার্বন চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. বন্যপ্রাণী ও গৃহপালিত পশুর খাদ্য
বুনো প্রাণী ও গৃহপালিত পশুর জন্য এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। দীর্ঘদিন ধরে গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সালসোলা। এটি ফিরে আসার ফলে স্থানীয় কৃষক ও পশুপালকদের জন্য একটি ইতিবাচক দিক সৃষ্টি হতে পারে।
৪. মরুভূমির সবুজায়নে ভূমিকা
যে কোনো মরু অঞ্চলের পুনঃসবুজায়নের জন্য স্থানীয় গুল্ম ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সালসোলার ফিরে আসা এই অঞ্চলের পরিবেশ উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়।
জলবায়ুর সঙ্গে সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
পরিবেশবিদরা মনে করেন, জলবায়ুর পরিবর্তনই সালসোলা গুল্মের ফিরে আসার অন্যতম কারণ হতে পারে। তবে এর পেছনে সৌদি আরব সরকারের কৌশলগত ভূমিকা এবং সংরক্ষণ নীতিও গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের পদক্ষেপ:
- সৌদি সরকার বর্তমানে চারণভূমির সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
- তৃণ ও গুল্মের বাছবিচারহীন আহরণ বন্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে।
- মরুভূমির পরিবেশ রক্ষার জন্য স্থানীয় উদ্ভিদ সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এই সমস্ত উদ্যোগের ফলে সালসোলা গুল্মের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়ছে এবং এটি ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হতে পারে।
শেষ কথা
দুই দশক পর হামাদ অঞ্চলে সালসোলা গুল্মের ফিরে আসা শুধু একটি সাধারণ উদ্ভিদ পুনরুদ্ধারের ঘটনা নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক সংরক্ষণ নীতি ও প্রাকৃতিক পুনর্জন্মের মাধ্যমে পরিবেশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সৌদি সরকার ও স্থানীয় জনগণের উচিত এই উদ্ভিদের সংরক্ষণে আরও মনোযোগ দেওয়া, যাতে এটি আবারও নিশ্চিহ্ন না হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তন, মরুভূমির সবুজায়ন, এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
আপনি কী মনে করেন? সালসোলা গুল্মের ফিরে আসা কি সত্যিই পরিবেশগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত, নাকি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক পুনর্জন্ম? আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!