রাজশাহী শহরের পরিচ্ছন্নতা এখন আর আগের মতো নেই। একসময় যেখানে রাজশাহী সিটি করপোরেশন শহরের প্রতিটি রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি চালাতো, সেখানে এখন দেখা যাচ্ছে, সেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে ময়লার স্তূপ, যা শহরের সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। ক্লিন সিটি থেকে আবর্জনার সিটি
বিশেষ করে ১২ ফেব্রুয়ারির পর শহরের কিছু এলাকা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, যেখানে রাস্তাঘাটে ময়লা জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং নর্দমাগুলো এখন বড় ধরনের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এক সময় শহরের প্রধান রাস্তা ও পাড়া-মহল্লায় প্রতি রাতে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার রাখা হতো, কিন্তু এখন এই কার্যক্রম যেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের কিছু এলাকায় সিটি করপোরেশন থেকে ময়লা পরিষ্কার করা হলেও, তা একেবারেই অপ্রতুল।
সাধারণ মানুষ জানাচ্ছেন, শহরের বিভিন্ন জায়গায় মাসের পর মাস ময়লা ফেলা হচ্ছে, কিন্তু সেই ময়লা সংগ্রহের জন্য সিটি করপোরেশন একটুও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে শহরের রাস্তাঘাট, বাড়ির সামনে ময়লার স্তুপ এবং তার থেকে উদ্ভূত দুর্গন্ধ বাসিন্দাদের কাছে এক বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগরী জুড়ে বেড়েছে মশার আক্রমণ
রাজশাহীতে আবর্জনার পাশাপাশি আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে মশা। শহরের কোথাও শান্তি নেই, রাস্তাঘাট, নদী তীর, অফিস কিংবা বাসা – সর্বত্রই শুধু মশা। কয়েক বছর আগেও মশা নিধন কার্যক্রম নিয়মিত ছিল, যেখানে সিটি করপোরেশন ফগার মেশিন ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু বর্তমানে তা আর কার্যকরভাবে চালু নেই। মশা নিধন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে, ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। ক্লিন সিটি থেকে আবর্জনার সিটি
এমনকি অনেক বাসিন্দার মতে, মশার প্রজনন স্থলগুলো, যেমন জলাশয় ও নর্দমাগুলো পরিষ্কার না হওয়ায় মশার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সিটি করপোরেশন যে দাবি করছে তারা নিয়মিত লার্ভা নিধন করছে, সেটি বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না। তাই, মশার সংখ্যা বাড়ছেই এবং তার ফলে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর বিপদ
এগুলো শুধু নগরবাসীর জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে না, বরং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও গভীর সংকেত বহন করছে। শহরের মধ্যে ময়লা জমে থাকার ফলে, বৃষ্টির সময় তা খাল বা নদীতে চলে যেতে পারে, যা জলজ বাস্তুসংস্থানে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। নর্দমার ময়লা যখন খালের পানি মিশে যায়, তখন তা শুধু পরিবেশগত ক্ষতিই ঘটায় না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি আরো বাড়ায়।
এছাড়া, মশার অত্যাচার বাড়ার কারণে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে। এই ধরনের পরিস্থিতি শহরের বাসিন্দাদের জন্য এক বিপদের ইঙ্গিত। মশার আধিক্য শুধু অসুস্থতার কারণ নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ুরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত যখন এটি মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বেশি প্রভাব ফেলে।
সিটি করপোরেশনের কর্তব্য
শহরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব যাদের, তাদের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আজকের দিনে এক শহরের পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার অভাব একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ময়লা পরিষ্কার না হওয়া বা মশা নিয়ন্ত্রণ না হওয়া শহরের পরিবেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিপদ হতে পারে। সিটি করপোরেশন যদি এই সমস্যা সমাধানে অতি দ্রুত উদ্যোগ না নেয়, তবে রাজশাহীর পরিবেশ সংকট আরও প্রকট হতে পারে।
শেষ কথা
রাজশাহী শহরের বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। যেখানে এক সময় শহরটি পরিচ্ছন্নতার জন্য একটি আদর্শ ছিল, সেখানে এখন সেই পরিচ্ছন্নতার অভাব শহরের বাসিন্দাদের জন্য একটি বড় বিপদ। মশার আক্রমণ, ময়লার স্তুপ, এবং নর্দমার অবস্থা – সবই রাজশাহীর পরিবেশের জন্য গভীর সংকেত। সিটি করপোরেশনের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় এবং নগরবাসীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
Call to Action (CTA): আপনার শহরে পরিচ্ছন্নতার অবস্থা কেমন? এই বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করুন এবং আরও পরিবেশ বিষয়ক তথ্যের জন্য আমাদের পেজটি ফলো করুন!