27 C
Bangladesh
বুধবার, জুন ২৫, ২০২৫
spot_img

দলছুট হাতিকে বাঁচাতে দুই দিন ধরে চিকিৎসদের লড়াই

হাতির দলছুট হয়ে কাদায় আটকে পড়া

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এক দলছুট বন্য হাতি কাদায় আটকে পড়েছে, যা প্রাণী সংরক্ষণে নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছে বন বিভাগকে। উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া পাহাড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা প্রথমে হাতিটিকে দেখতে পান এবং বন বিভাগকে খবর দেন। হাতির দলছুট

বন বিভাগ ও স্থানীয়দের টানা ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় হাতিটিকে উদ্ধার করা হয়। তবে দীর্ঘসময় কাদায় আটকে থাকার কারণে হাতিটি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছিল না। এ অবস্থায় বন বিভাগ ও পশু চিকিৎসকদের একটি দল হাতিটিকে সুস্থ করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।

হাতির শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা

উদ্ধারের পর বন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা জানান, হাতিটির বয়স আনুমানিক ৪০ বছর এবং এটি একটি মাদি হাতি। দীর্ঘ সময় কাদায় আটকে থাকার ফলে এটি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যায়। পুষ্টিহীনতার কারণে হাতিটি নিজের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছিল না।

তাই তাৎক্ষণিকভাবে হাতিটিকে স্যালাইনযুক্ত পানি খাওয়ানো হয়, যাতে এটি শক্তি ফিরে পায়। এরপর চকরিয়া সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাত জুলকার নাঈমের নেতৃত্বে চিকিৎসক দল হাতিটির সেবায় নিয়োজিত হন। তারা গত দুই দিন ধরে হাতিটির শরীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন, ওষুধ দিচ্ছেন এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। হাতির দলছুট

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে হাতির মতো বৃহৎ প্রাণীগুলো ক্রমশ সংকটের মুখে পড়ছে। বাঁশখালীতে কাদায় আটকে পড়া হাতির ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি একটি বড় সমস্যার প্রতিফলন। বনভূমি ধ্বংস, খাদ্যের অভাব এবং মানুষের সঙ্গে সংঘাত বাড়ায় বন্যপ্রাণীর টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে। এই সংকট মোকাবিলায় বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

১. বনভূমি সংকোচন ও হাতির আবাসস্থল হারানো

বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন, কৃষিজমি বাড়ানো এবং অবৈধ কাঠ কাটার কারণে হাতিদের বসবাসের জায়গা কমে আসছে। চুনতি অভয়ারণ্য ও পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে আগে যে পরিমাণ খাবার ও নিরাপদ আশ্রয় ছিল, এখন তা নেই। ফলে হাতির দল এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দলছুট হয়ে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা বাড়ছে।

২. মানুষ-হাতি সংঘাতের বৃদ্ধি

হাতির খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ায় তারা গ্রাম ও জনবসতিতে ঢুকে পড়ে। এতে ফসল নষ্ট হয়, বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কখনো কখনো মানুষের প্রাণহানিও ঘটে। স্থানীয়রা অনেক সময় হাতিকে তাড়াতে আক্রমণাত্মক পদ্ধতি অবলম্বন করেন, যা বন্যপ্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। এই ধরনের সংঘাত কমাতে প্রয়োজন জনসচেতনতা ও বিকল্প খাদ্য উৎস তৈরি।

৩. বন বিভাগের জনবল ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশের বন বিভাগ বন্যপ্রাণী রক্ষায় কাজ করলেও তাদের জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এখনো সীমিত। হাতির মতো বিশাল আকারের প্রাণী উদ্ধার ও চিকিৎসার জন্য উন্নত সরঞ্জাম ও দক্ষ কর্মী প্রয়োজন, যা বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানো দরকার।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: কী করা দরকার?

১. হাতির করিডর সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার

হাতিগুলোর চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট করিডর (হাতির চলাচলের প্রাকৃতিক পথ) সংরক্ষণ করা জরুরি। চুনতি অভয়ারণ্য ও পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে হাতিদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানির উৎস তৈরি করতে হবে।

২. স্থানীয় জনগণের জন্য সচেতনতা কার্যক্রম

মানুষ-হাতি সংঘাত কমাতে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে। হাতি গ্রামে ঢুকে পড়লে কীভাবে নিরাপদে তাদের বের করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। হাতির আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় সহিংস হওয়ার পরিবর্তে বিকল্প প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

৩. উন্নত উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা

বন বিভাগকে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে উন্নত উদ্ধারযান, প্রশিক্ষিত পশু চিকিৎসক ও দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য বিশেষ টিম গঠন করা প্রয়োজন। এছাড়া, বন বিভাগের জন্য আরও বাজেট বরাদ্দ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা জরুরি।

৪. হাতিদের জন্য খাদ্য ও জলাশয় তৈরি

খাদ্যের অভাবে হাতিরা মানুষের গ্রামে ঢুকে পড়ছে। তাই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হাতিদের জন্য নির্দিষ্ট খাবারের জায়গা তৈরি করতে হবে। পাহাড়ি এলাকায় জলাশয় ও কৃত্রিম খাদ্য উৎস গড়ে তুললে হাতিরা সহজেই সেখানে থাকতে পারবে।

শেষ কথা

বাঁশখালীতে দলছুট হাতির অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা একটি সতর্কবার্তা। আমাদের বনভূমি, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। হাতিদের চলাচলের করিডর, খাদ্য সরবরাহ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে এ ধরনের ঘটনা কমবে। বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ একসঙ্গে কাজ করলে মানব-হাতি সংঘাতও কমে আসবে এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

আপনার মতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য কী করা উচিত? কমেন্টে জানান!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ