এখনকার সময়ে অভয়াশ্রমগুলি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু যখন এই অভয়াশ্রমে মাছ শিকার করা হয়, তখন তা শুধু ওই অঞ্চলের মাছের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যকেই বিপন্ন করে না, পরিবেশের জন্যও বিপদ ডেকে আনে। সম্প্রতি, নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদী থেকে অবৈধভাবে মাছ শিকার করার ঘটনা প্রকট হয়ে উঠেছে। মান্দায় অভয়াশ্রম থেকে মাছ লুট
অভয়াশ্রমে মাছ শিকার: কীভাবে চলছে এই কার্যক্রম?
মান্দার বাগাতিপাড়া কবরতলাদহ অভয়াশ্রমসহ আশপাশের এলাকায় জাল দিয়ে মাছ শিকারের কার্যক্রম বেড়ে গেছে। অধিকাংশ শিকারি নিষিদ্ধ চায়না রিংজাল ও কচাল জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে, আত্রাই নদীতে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে এই জাল ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, “নদের পানি কমতে থাকায় ৩-৪ দিন ধরে অভয়াশ্রম এলাকায় রিংজাল ফেলার হিড়িক পড়ে গেছে। মাছ শিকারের জন্য অনেকে আবার নতুন রিংজাল কিনেছে।” এই অবৈধ কার্যক্রমটি শুধু মাছের প্রজনন প্রক্রিয়াকেই বাধাগ্রস্ত করছে না, পাশাপাশি নদীর বাস্তুসংস্থানের উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে।
অভয়াশ্রমের উদ্দেশ্য এবং এর ক্ষতি
আত্রাই নদীতে বুড়িদহ ও বাগাতিপাড়া কবরতলাদহ এলাকায় দুটি অভয়াশ্রম গঠনের উদ্দেশ্য ছিল মাছের প্রাকৃতিক প্রজননকে সুরক্ষিত রাখা এবং যখন নদীর পানি বৃদ্ধি পায়, তখন মাছের পোনা সারা নদীতে ছড়িয়ে পড়বে। তবে, যদি এই অভয়াশ্রমের মাছ চুরি হয়ে যায়, তবে পুরো এলাকায় মাছের সংখ্যা এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হবে। মান্দায় অভয়াশ্রম থেকে মাছ লুট
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিপংকর পাল এই বিষয়ে বলেন, “অভয়াশ্রম করা হয়েছে যাতে খরা মৌসুমে পানি কমে গেলে মাছ সংরক্ষিত থাকে এবং নতুন পানি আসলে মাছের পোনা ছড়িয়ে পড়ে।” তবে, এই কার্যক্রমটি যদি অবৈধ শিকারীদের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়, তা হবে বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
মান্দা উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্য দপ্তরের যৌথ অভিযানে নিষিদ্ধ রিংজাল জব্দ করা হয়েছে। তবে, যতদিন না এই অবৈধ শিকার বন্ধ করা হবে, ততদিন এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া জানিয়েছেন, “অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ শিকার করার সংবাদে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ রিংজাল জব্দ করা হয়েছে।”
পরিবেশের জন্য কীভাবে ক্ষতিকর এই অবৈধ শিকার?
১. মাছের প্রজনন ব্যাহত হওয়া: অভয়াশ্রমের মাছ শিকার করলে সেগুলি প্রজননের জন্য অপর্যাপ্ত সময়ে নিঃসৃত হয়, যা মাছের সংখ্যা কমিয়ে দেয়।
২. নদী বাস্তুসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া: অবৈধ জাল ব্যবহারের ফলে নদীর বাস্তুসংস্থানে ভিন্নধর্মী পরিবর্তন ঘটে, যা জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য হুমকি তৈরি করে।
৩. অবৈধ মৎস্য ব্যবসা বৃদ্ধি: অবৈধ মাছ শিকার ক্রমেই একটি মাফিয়া ব্যবসায় পরিণত হয়ে উঠছে, যা পুরো অঞ্চলের পরিবেশ ও অর্থনীতিকে বিপন্ন করছে।
চূড়ান্ত কথা
এখনও সময় আছে, যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে এই অবৈধ শিকার প্রক্রিয়া আত্রাই নদীর মাছের সংখ্যা ও বাস্তুসংস্থানে অপ্রত্যাশিত ক্ষতি করবে। স্থানীয় প্রশাসন এবং মৎস্য দপ্তর যদি কার্যকরী অভিযান চালিয়ে এই অবৈধ শিকারকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তবে সামগ্রিকভাবে আমাদের পরিবেশে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটবে।
এখনই সক্রিয় হোন!
আপনার মতামত শেয়ার করুন এবং এই পরিবেশগত বিপর্যয়ের ব্যাপারে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন।
#মান্দা #অভয়াশ্রম #মাছ_শিকার #পরিবেশ #জলবায়ু #অবৈধ_শিকার