26.5 C
Bangladesh
মঙ্গলবার, জুন ২৪, ২০২৫
spot_img

সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ: বন রক্ষা নাকি দুর্নীতির নতুন মডেল?

সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ, যা উপকূলীয় অঞ্চলকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি হাজারো মানুষের জীবিকার মাধ্যম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গোলপাতা আহরণকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতি, ঘুষ এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে, যা বন সংরক্ষণের চেয়ে ধ্বংসই ত্বরান্বিত করছে। সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ

গোলপাতার আড়ালে কী ঘটছে?

প্রতি বছর নির্দিষ্ট মৌসুমে গোলপাতা আহরণের অনুমতি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পরিমাণ গোলপাতা সংগ্রহের জন্য সরকারি রাজস্ব প্রদান করতে হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

বাওয়ালিরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও বিভিন্ন মহলকে বিপুল পরিমাণ ঘুষ দিতে হচ্ছে। বন বিভাগের নির্দিষ্ট কিছু সদস্য, স্থানীয় চাঁদাবাজ চক্র এবং কিছু অসাধু ব্যক্তি নানাভাবে অর্থ আদায় করছে।

একজন বাওয়ালির ভাষায়, “বনে ঢুকলেই ঘুষ দিতে হবে। না দিলে নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়—জরিমানা, অনুমতি বাতিল, এমনকি মামলা পর্যন্ত দেওয়া হয়।”

এ বছর ঘুষের পরিমাণ আরও বেড়েছে। যেখানে পূর্বে ২০-৩০ হাজার টাকা দেওয়া হতো, এবার সেটি ৫০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত গিয়েছে।

বন বিভাগের ভূমিকা: পাহারাদার নাকি সুবিধাভোগী?

বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তা এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও বাওয়ালিরা বলছেন, প্রতি মৌসুমে ঘুষের পরিমাণ বাড়ছে। নৌকাপ্রতি নির্দিষ্ট রাজস্ব পরিশোধের পরও বারবার অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে। সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ

গোলপাতার আড়ালে বন ধ্বংস?

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কারণে বাওয়ালিরা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি গোলপাতা সংগ্রহে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক নৌকায় অনুমোদিত ৫০০ মণের বদলে ২০০০-২৫০০ মণ পর্যন্ত পাতা তোলা হচ্ছে, যার সঙ্গে মূল্যবান কাঠও পাচার হচ্ছে।

বন সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “গোলপাতা না কাটলেও সুন্দরবনের ক্ষতি হয় না, বরং এটি স্বাভাবিকভাবেই বেঁচে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত আহরণের ফলে নতুন ঝাড় গজানোর সুযোগ কমে যাচ্ছে, বন উজাড় হচ্ছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।”

পরিবেশের ওপর প্রভাব

সুন্দরবন বাংলাদেশের জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এভাবে বন নিধন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আরও তীব্র হবে। গাছ কাটা ও অতিরিক্ত আহরণের ফলে বনের ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল ধ্বংসের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।

সমাধানের উপায় কী?

  1. স্বচ্ছ তদারকি ব্যবস্থা: গোলপাতা আহরণের পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। সরকারি কর্তৃপক্ষকে ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
  2. বন সংরক্ষণ ও বিকল্প জীবিকা: বনজীবীদের বিকল্প জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা জীবিকার জন্য অতিরিক্ত আহরণে বাধ্য না হন।
  3. স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা: বন রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং তাদের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
  4. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বন ব্যবস্থাপনা: গোলপাতা সংগ্রহের নির্দিষ্ট সীমা এবং এর পুনরায় জন্মানোর প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা প্রয়োজন।

শেষ কথা

সুন্দরবন রক্ষা করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি সবার দায়িত্ব। দুর্নীতি, অবৈধ কাঠ সংগ্রহ ও অতিরিক্ত আহরণ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে এই বন তার স্বাভাবিক ভারসাম্য হারাবে, যার প্রভাব পড়বে পরিবেশ, জলবায়ু এবং মানুষের জীবিকার ওপর। তাই এখনই সচেতন হতে হবে, নয়তো সুন্দরবন হারিয়ে যাবে দুর্নীতির দৌরাত্ম্যে।

আপনার মতামত কী? আপনার মনে কি সুন্দরবন রক্ষার জন্য কোনো কার্যকর সমাধান আছে? কমেন্টে জানান এবং পোস্টটি শেয়ার করে সচেতনতা বাড়ান!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ