26.6 C
Bangladesh
মঙ্গলবার, জুন ২৪, ২০২৫
spot_img

চট্টগ্রামে ৯৭টি গাছ কাটার পিছনের গল্প: পরিবেশের দামে উন্নয়ন?

চট্টগ্রামের বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) শুরু হওয়া আগর গবেষণাগারের ভবন নির্মাণ কাজের জন্য গত এক সপ্তাহে কাটা হয়েছে ৯৭টি গাছ। এই ঘটনায় পরিবেশকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, যাদের দাবি, গাছ কাটার অনুমোদন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নেওয়া হয়নি। একদিকে, এটি গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে, তবে পরিবেশের জন্য এটি কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। চট্টগ্রামে ৯৭টি গাছ কাটার পিছনের গল্প

গাছ কাটার ঘটনায় ক্ষোভ:

চট্টগ্রামের মুরাদপুরে বিএফআরআইয়ের অভ্যন্তরে নির্মিতব্য আগর গবেষণাগারের জন্য ৯৭টি গাছ কাটা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই পরিপক্ব ইউক্যালিপটাস, মেহগনি, তেলসুর, ঢাকিজাম, কদম, এবং অন্যান্য জাতের গাছ ছিল। এই গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত, যদিও প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পেয়ে ছিল, তবুও কিছু পরিবেশকর্মী মনে করেন যে, প্রকৃত অনুমোদন প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল না। তাঁরা অভিযোগ করছেন, প্রকল্পের কর্মকর্তারা গাছ কাটার বিষয়ে পরিবেশ এবং পরিবেশকর্মীদের উদ্বেগকে অবজ্ঞা করেছেন।

প্রকল্পের অনুমোদন ও গাছ কাটার পেছনের ইতিহাস:

২০১৯ সালে সরকারের অনুমোদন পায় “সম্পূর্ণ বৃক্ষে উন্নতমানের আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রকল্প”। তবে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের স্থান এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য নানা বাধা ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই গবেষণাগার নির্মাণের জন্য ৯৭টি গাছ কাটার প্রয়োজন পড়েছিল। কিন্তু গাছ কাটার জন্য বন বিভাগ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি, গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল একটি স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে, যেখানে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়া অন্যান্য কর্মকর্তারা গাছ কাটার অনুমোদন দেন। এই ধরনের পদক্ষেপ অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ মনে করছেন, কারণ গাছ কাটার অনুমোদন প্রক্রিয়া সরকারি নীতিমালার বিরুদ্ধে ছিল। চট্টগ্রামে ৯৭টি গাছ কাটার পিছনের গল্প

গাছ কাটার ক্ষতি এবং সমাধান:

প্রকল্পের পরিচালক জাকির হোসাইন দাবি করেছেন যে, কাঠ কাটার সময় কাটানো গাছগুলোর মধ্যে অনেকগুলো পরিপক্ব ছিল, এবং তারা একে পরবর্তী সময়ে পরিবর্তনযোগ্য দেশীয় গাছ দিয়ে প্রতিস্থাপন করবেন। তবে পরিবেশকর্মীদের মতে, এটি পরিবেশের ভারসাম্য এবং বায়ু এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি বড় ধরনের বিপদ। গাছগুলো পরিবেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা যারা বুঝে না, তারা কখনই এর প্রভাব সম্পর্কে জানবে না। এ ধরনের প্রকল্পের ফলে যে পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে, তা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম শহর এবং এর আশপাশের এলাকায় খারাপ জলবায়ু পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

পরিবেশকর্মীদের প্রতিবাদ:

এই গাছ কাটার ঘটনায় পরিবেশকর্মীরা সোচ্চার হয়েছেন। সংগঠক রিতু পারভীন জানিয়েছেন, “বন রক্ষকরা যদি গাছ ধ্বংস করেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব?” তাঁর মতে, প্রকল্প পরিচালনার কর্তৃপক্ষ পরিবেশের অধিকারকে অবজ্ঞা করে গাছ কাটতে আগ্রহী, যার ফলস্বরূপ পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি আরও বলেন, “এভাবে প্রকল্পের স্বার্থে প্রকৃতির ক্ষতি করা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”

পরিবেশের জন্য সম্ভাব্য বিপদ:

গাছগুলি পরিবেশের জন্য এক ধরনের সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। এগুলি বায়ু শুদ্ধীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং বন্যপ্রাণীর বাসস্থান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন এদের কাটা হয়, তখন তা শুধু বায়ুমানের জন্য বিপদজনক হয় না, বরং জলবায়ুর উন্নতি ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যেও বড় ধরনের হুমকি তৈরি করে।

নিষ্কর্ষ:

এটি একটি পরিষ্কার উদাহরণ যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ একসাথে চলতে পারে না যদি পরিকল্পনার মধ্যে যথাযথ পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ না থাকে। ভবিষ্যতের জন্য একটি আরও উন্নত ও সচেতন মনোভাব গড়ে তুলতে হবে, যেখানে প্রকল্পগুলি পরিবেশগত সুরক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়। চট্টগ্রামের এই গাছ কাটার ঘটনা থেকে আমাদের শেখার আছে যে, প্রকৃতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া উচিত নয়, এবং পরিবেশকর্মীদের মতামত ও উদ্বেগকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া প্রয়োজন।

অভিযান:

তবে, এখনও সময় রয়েছে। যদি আপনি পরিবেশ সুরক্ষায় আগ্রহী হন, তবে এখনই আপনার মতামত জানাতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে #গাছ_কাটা_প্রতিরোধ_করুন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন এবং পরিবেশ রক্ষায় আমাদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাতে পারেন।

Call-to-Action: আপনার মতামত এবং উদ্বেগ জানাতে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। পরিবেশ রক্ষায় আপনার অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আরও পড়ুন

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
spot_img

সর্বশেষ সংবাদ