রাজশাহীতে জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ এবং বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাটি সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের একটি রেস্তোরাঁয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবর্তন’, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্ম জোট (ক্লিন) এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এক্সটার্নাল ডেব্ট (বিডব্লিউজিইডি) এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।
বিকল্প জ্বালানি পরিকল্পনা: স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই আলোচনায় বিকল্প জ্বালানির ভবিষ্যৎ এবং তার পরিবেশবান্ধব প্রভাব নিয়ে গভীর আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষত, দেশের জ্বালানি খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থার বিকাশ অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন আলোচকরা।
ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ: বিপ্লবী ধারণা
এদিনের আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার। মাহবুব আলম, একজন পরিবেশবিদ এবং ক্লিনের প্রধান সমন্বয়কারী, সভায় উল্লেখ করেন যে, দেশের শিল্প খাতের ছাদে ৫ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করলে বছরে প্রায় ৮ হাজার ১০০ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। পাশাপাশি আবাসিক ভবনের ছাদে ২৫ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করে ৪৮ হাজার ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি: ২০৩৫ পরবর্তী পরিকল্পনা
মাহবুব আলম আরো বলেন, ২০৩৫ সালের পর যখন বহু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে এবং উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাবে, তখন আমাদের জন্য কোনো কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় শীঘ্রই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
মুক্ত আলোচনা: নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার
প্রধান প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর একটি মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইনজীবী, সাংবাদিক, পরিবেশ কর্মী সহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা অংশ নেন। তাঁরা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিকল্প সম্ভাবনা, নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতবিনিময় করেন। অংশগ্রহণকারীরা টেকসই ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রশাসনের উপস্থিতি
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মহিনুল হাসান। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের ডিজিএম, নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজশাহী জেলা ক্যাবের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। সভাটি পরিচালনা করেন পরিবর্তনের পরিচালক রাশেদ রিপন।
টেকসই ভবিষ্যত: আমাদের করণীয়
এ আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থার বিকাশ দেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে আমরা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে পারি। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষা করবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখবে।
বিশেষজ্ঞরা আরো উল্লেখ করেছেন যে, সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের উচিত এমন টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যা দেশের জ্বালানি সংকট নিরসন করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
উপসংহার
রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থার বিকাশ, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তির উন্নয়ন, দেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ও পরিবেশবান্ধব পথ হতে পারে। তাই আগামী দিনে এ বিষয়ে অধিক মনোযোগী হওয়া এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখনই সময়, সমাধান ও পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা করার।
আমাদের প্রস্তাব
এই আলোচনার সাথে সম্পর্কিত আপনার মতামত এবং চিন্তা শেয়ার করুন, এবং আমাদের এই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে সমর্থন জানান।